ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঐতিহ্যবাহী বজরা মসজিদ

ইকবাল হোসেন সুমন, নোয়াখালী
🕐 ৬:০৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯

১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে নোয়াখালীর ভুলুয়া দ্বীপ অঞ্চলে কিছু সংখ্যক মুসলমান ধর্মীয় যোদ্ধা সুফি সাধকের আগমন ঘটে। বজরা নামক নৌযানে করে সমুদ্র পথে দিল্লি থেকে আগমন করেন তারা। সেখানে বালু স্তরে তাদের নৌকা আটকে গেলে নোঙর করে তারা প্রথম নামাজ পড়েন।

১৭৪১ খ্রিস্টাব্দে সেই স্থানেই বজরা শাহী মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাদের বজরা নৌযানের নামেই বজরা নামকরণ করা হয়। সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা শাহী জামে মসজিদ দিল্লির জামে মসজিদের অনুকরণে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

মসজিদটির অবস্থান নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় এক সময় হাজারও পর্যটকের দেখা মিলতো এ বজরায়। প্রতিদিনের পর্যটকরা দেখতে আসতেন শাহী মসজিদে। তবে এখন আর তেমন পর্যটক নেই।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মুসলিম ধর্মীয় যোদ্ধা ও সুফি সাধকদের মধ্যে মিয়া অম্বর শাহের ব্যক্তিত্ব, সাহসিকতা সততা, ন্যায়নীতি ও মানব প্রেমে অভিভুত হয়ে বজরা অঞ্চলে ওমরাবাদ পরগণায় (পূর্বে দাদরা ওমরাবাদ) ইসলাম ধর্মের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটায়। ওমরাবাদ জমিদার পরিবারের সন্তান জমিদার আমান উল্যা খান ছোট বেলায় পরিবারের পক্ষ থেকে দিল্লি দেওবন্দ মাদ্রাসা শিক্ষা শেষে দেশে ফিরে নিজ পরগনার জমিদার বাড়ির দরজার সামনে প্রায় ১৬ একর জমির উপর বিশাল দীঘি খনন করেন।

দীঘির পশ্চিম-দক্ষিণ পাড়ে ১৭৪১ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি শাহী জামে মসজিদের অনুকরণে বজরা শাহী জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০ ফুট মাটির নিচ থেকে গাঁথুনি দিয়ে সম্পূর্ণ চুন সুরকিতে তৈরি সুদৃশ্য তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের দৈর্ঘ্য ১১৬ ফুট, প্রস্থ’ ৭৪ ফুট এবং উচ্চতা ২০ ফুট। এর বিশেষত্ব হচ্ছে প্রথম প্রবেশ পথে একটি স্বাগত গেট। অভ্যন্তরের প্রবেশ দ্বারে আরেকটি আকর্ষণীয় তোরণ।

এর ভেতরে চারদিক দেয়াল ঘেরা, মাঝখানে ফাঁকা। এর এক পাশে শায়িত আছেন জমিদার আমান উল্যা ও ভ্রাতা ছানাউল্যা এবং মহীষসী মাতা বিবি মরিয়ম জমিদার। মসজিদের ভেতরে প্রবেশের জন্য তিনটি সুদৃশ্য ধনুকাকৃতির প্রবেশ পথ। সামনে পূর্ব দিকে বিশাল খোলা প্রাঙ্গন অদূরে দীঘির পাড়ে বিশাল পাকা ঘাটলা এবং মসজিদের দক্ষিণ পাশে খালি জায়গায় রয়েছে জমিদার বংশের পারিবারিক কবরস্থান।

দীর্ঘ দিন থেকে মসজিদে শিরনিসহ নানা দান-মানত দিতে অনেকে আসতো। মুসলিম ধর্মীয় পরিবারে রোগমুক্তি শান্তি সমৃদ্ধির উদ্দেশে হাজার হাজার লোকজন দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ভিড় করতো বজরা শাহী মসজিদে। বজরা শাহী মসজিদের পশ্চিমে অবস্থিত ওমরাবাদ পরগনার জমিদার বাড়ি। জমিদার বাড়ির দরজার সেই ঐতিহাসিক কাচারি ঘর যা আজও স্থানীয় বজরা ইউনিয়নের তহসিল অফিস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

তহসিল অফিসের সাবেক কর্মকর্তা মাস্টার আবদুর রাজ্জাক জানান, প্রয়াত জমিদার আমান উল্যা, নেয়ামত উল্যা জমিদারির ১০ আনা এবং নবাব ফয়েজের নেছা ছয় আনা মালিক ছিলেন। বাড়ির আয়তন ছিল পাঁচ একর। বৃটিশ আমলে জমিদারি হস্তান্তর হলে তারা কুমিল্লা থেকে জমিদারি খাজনা আদায় করতে আসতেন এখানে।

১৯৫৩ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে ১৯৫৬ সালের দিকে স্থায়ীভাবে ওমরাবাদ পরগনার জমিদারগণ কুমিল্লায় চলে যান। কুমিল্লার নবাব ফয়েজুন্নেছা কলেজ, দক্ষিণ চরতা মুন্সি বাড়ি ও সাহাব বাড়ি গার্লস স্কুল, ওমরাবাদ বংশের জমিদাদেরই প্রতিষ্ঠিত।

 
Electronic Paper