ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নাব্য সংকটে খরস্রোতা মাতামুহুরী নদী

এম. মনছুর আলম, চকরিয়া (কক্সবাজার)
🕐 ৬:৫২ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯

পাহাড়ে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন ও পাথর আহরণের কারণে নব্য সংকটে ধুঁকছে খরস্রোতা মাতামুহুরী নদী। নদীর বুকে জেগে উঠেছে মাইলের পর মাইল বালুরচর। এতে নৌযান চলাচল, মৎস্য সম্পদ সংকট, কাঠ ও বাঁশ পরিবহণে দুর্ভোগের অন্ত থাকছে না।

তিন বছর আগে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে পাইলট প্রকল্পের আওতায় নদীর নাব্য ফেরাতে ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বর্তমানে তা বন্ধ রয়েছে। তবে নদীপাড়ের মানুষের উদ্যোগে একাধিক পয়েন্টে ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে। যদিও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ড্রেজিং অনেক ব্যয়বহুল তা কতদিন অব্যাহত থাকবে তা নিয়ে সন্দিহান নদীপাড়ের মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, এ অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে মাতামুহুরী নদীর রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। এ নদীর পানি যেমন কৃষকের ফসলের শক্তি যোগায় তেমনি নানা প্রজাতির মাছ ধরে জেলেদের জীবন জীবিকার সহায়ক হতো। এক সময় স্থানীয় জেলেরা নৌকায় নদীতে জাল ফেলত। সকালে মাছ ধরে বিকেলে বাজারে বিক্রি করে পরিবারের অন্ন যোগাত। চকরিয়ার সিংহভাগ মাছের চাহিদা মিটতো মাতামহুরী নদীর মাছ দিয়ে। এখন সেই নদী জেলেশূন্য।

মৎস্য কর্মকর্তাদের মতে, মাতামুহুরী নদীর দুই তীরে দীর্ঘ দুই দশকের তামাক চাষের বিরূপ প্রভাব পড়ছে মাছের ওপর। তামাক ক্ষেতে অতিমাত্রায় ইউরিয়া সার ও নানা ধরনের কীটনাশক ছিটানো হয়। এসব কীটনাশক পানির সঙ্গে মিশে নদীতে পড়ে। এতে নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন ক্ষমতা লোপ পাচ্ছে এবং ছোট ছোট মাছ মরে যাচ্ছে।

মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, এককালের খরস্রোতা মাতামুহুরীর তলদেশ ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নাব্য হ্রাস, তীরবর্তী জমিতে বেপরোয়া তামাক চাষের বিরূপ প্রভাব পড়েছে মাতামুহুরী নদীতে। এখন আর আগের মতো মাছ ধরা পড়ে না জেলের জালে। মৎস্যশূন্য হয়ে পড়ছে। এককালে নদীতে ছিল গভীরতা। এখন আর সেটা নেই। প্রতি বছর আষাড়-শ্রাবণ মাসে যখন বর্ষা আসে তখন মাতামুহুরী অগ্নিমূর্তি ধারণ করত। নদীর দুই কূল উপচে পড়ত পানি।

স্থানীয়রা জানান, তামাক চাষের ক্ষতিকর প্রভাব ছাড়াও মাতামুহুরীতে মৎস্য সম্পদের বিলুপ্তি ঘটছে একশ্রেণির লোভী মৎস্য শিকারীদের কারণে। মৎস্য বিভাগের দায়িত্বে অবহেলার কারণে জেলেরা নদীতে বিষ দিয়ে মাছ আহরণ করে। এতে নদীতে মাছ মরে ভেসে উঠে। বিশেষ করে বিষের কারণে চিংড়ি মাছ মারা পড়ে বেশী।

এছাড়াও নদীর যেখানে একটু গভীরতা আছে সেখানেই জেলেরা জঙ্গল কেটে ঘের তৈরি করে। কিছুদিন পর ঘেরের চারপাশে বিষ দিয়ে একশ্রেণির পাহাড়ি গাছের ফলের রস ছিটিয়ে মাছ আহরণ করা হয়। প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়েও এ নদীতে মাছ শিকার করা হয়।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুদ্দিন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তী এলাকায় তামাক চাষ বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া হবে। নদীর তীরে তামাক চাষের কারণে মৎস্য ভাণ্ডারের অপুরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।

 
Electronic Paper