ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পানির দাম দ্বিগুণ চট্টগ্রাম ওয়াসায়!

আহসান হাবিব, চট্টগ্রাম
🕐 ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০১৯

প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম একলাফে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। আবাসিক সংযোগে এক হাজার লিটার পানির দাম ৯ টাকা ৯২ পয়সার স্থলে ১৬ টাকা ও বাণিজ্যিকে ২৭ টাকা ৫৬ পয়সার স্থলে ৪৫ টাকা করার গ্রাহকের স্বার্থবিরোধী প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড। শুক্রবার বোর্ড সভায় এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়।

পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, গ্রাহকের স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। সংস্থাটি সেবার মান না বাড়িয়ে কিছুদিন পরপর পানির দাম বাড়াচ্ছে। ‘সিস্টেম লস’ লিকেজের কারণে অনেক টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওয়াসা। সেদিকে নজর না দিয়ে গ্রাহকের ঘাড়ে বোঝা তুলে দিচ্ছে সংস্থাটি।

এ ক্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, ওয়াসার বোর্ড সভায় এ ধরনের প্রস্তাব অনুমোদন অন্যায় ও অযৌক্তিক। আশা করি, মন্ত্রণালয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এটা অনুমোদন করবে না। যে প্রকল্পগুলোর অজুহাত দেওয়া হচ্ছে সেগুলোর বাজেট বারবার বাড়ানো হয়েছে। এমনকি এসব প্রকল্পে অনিয়মের কথাও শোনা গেছে। কারও অদক্ষতার জন্য যদি প্রকল্পের ব্যয় কয়েকগুণ বাড়ে, সেটার দায় জনগণের ঘাড়ে চাপানো যায় না বলে মন্তব্য করেন এসএম নাজের হোসাইন।

নাজের আরও বলেন, মোট পানি উৎপাদনের যে হিসাব ওয়াসার পক্ষ থেকে দেওয়া হয় তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তাই প্রতি ইউনিটে যে খরচের হিসাব দেখানো হচ্ছে, সেখানেও গোঁজামিল আছে।

বোর্ড সভা শেষে চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, পানির প্রকৃত উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের সামঞ্জস্য রেখে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি এখন মন্ত্রণালয়ে যাবে। সেখানে অনুমোদন হলে নতুন দাম কার্যকর হবে। সভায় আবাসিকে প্রতি ইউনিট পানির দাম ১৬ টাকা ও বাণিজ্যিক সংযোগে পানির দাম ৪৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। তবে বাণিজ্যিকে ৫ টাকা কমিয়ে সেটি ৪০ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়।

তিনি আরও বলেন, আগে ভূ-গর্ভস্থ পানি বেশি উত্তোলন করত ওয়াসা। এখন ভূ-উপরিস্থ পানির দিকে ঝুঁকছে। ভূ-উপরিস্থ পানি আলাদাভাবে শোধন করা হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে। দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

আইন অনুসারে বছরে শুধু একবার ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বৃদ্ধির সুযোগ থাকে। কিন্তু চলতি বছর ছয় মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার দাম বাড়ানোর এ প্রস্তাব করল চট্টগ্রাম ওয়াসা। পানি উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধি এবং শোধনাগার প্রকল্পগুলোর ঋণ ও সুদ পরিশোধের জন্য দাম বৃদ্ধির এ প্রস্তাব বলে জানিয়েছেন ওয়াসার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। গতকাল বোর্ড সভায় পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন হলেও এটাকে ‘প্রস্তাব’ বলতে নারাজ ওয়াসার এ দুই শীর্ষ কর্মকর্তা। তারা জানান, সরকারের কাছে খরচের হিসাব তুলে ধরছেন। দাম বাড়ানো হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ায় চট্টগ্রাম ওয়াসা। তখন আবাসিকে প্রতি ইউনিট ৯ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৯২ পয়সা এবং বাণিজ্যিক খাতে প্রতি ইউনিট ২৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৭ টাকা ৫৬ পয়সা করা হয়।

জানতে চাইলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, বড় প্রকল্পের খরচ তো পরিশোধ করতে হয়। ২০২২ সালের পর সুদসহ শোধ করতে হবে। তখন খরচ আরও বাড়বে। সবদিক চিন্তা করে, জনগণের ওপর যাতে চাপ না হয় সেভাবেই করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বাড়ানোর ক্ষমতা আছে শুধু বছরে ৫ শতাংশ। আমরা সরকারকে খরচের বিষয়টা জানাচ্ছি। প্রতিষ্ঠানকে সক্ষম রাখতে হলে এ পর্যায়ে আসতে হবে। পানি যে মূল্যবান, সেটাও মানুষকে জানতে হবে। নদীর পানি ঘোলা হওয়ায় তা শোধনে খরচ বেড়ে যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উল্লেখ্য, আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার গ্রাহক ৭১ হাজার ১৩০। এর মধ্যে ৬৪ হাজার ১৯টি আবাসিক সংযোগ এবং বাকি ৭ হাজার ১১১টি অনাবাসিক সংযোগ। চট্টগ্রামে দৈনিক পানির চাহিদা ৫০ কোটি লিটার। ওয়াসার দাবি অনুসারে এর মধ্যে সংস্থাটি ৩৬ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে পারে।

 
Electronic Paper