আদালত কর্মচারীর সাত কোটি টাকার সম্পদ
গ্রেফতারের সাত ঘণ্টায় জামিন
নোয়াখালী প্রতিনিধি
🕐 ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ০৬, ২০১৯
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচার মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে গ্রেফতার হওয়ার প্রায় সাত ঘণ্টার মাথায় জামিন পেয়েছেন নোয়াখালী জেলা জজ আদালতের কর্মচারী নাজির আলমগীর হোসেন। তার বিরুদ্ধে দুদকের এক মামলায় আয়-বহির্ভূত ৭ কোটি ১৭ লাখ ৩৫ হাজার ৬২৫ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বেনামে সম্পদ অর্জন এবং ভুয়া প্রতিষ্ঠান মেসার্স ঐশী ট্রেডার্সের ব্যবসার আড়ালে মোট ২৭ কোটি ৮২ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৬ টাকা অবৈধভাবে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করেছেন।
গতকাল সোমবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে শহরের কৃষ্ণরামপুর এলাকার বাড়ির সামনে থেকে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদ তাকে গ্রেফতার করেন। পরে বেলা একটার দিকে নাজির আলমগীর হোসেনকে জেলা জজ আদালতে নেন দুদকের কর্মকর্তারা। বিকাল ৪টার দিকে শুনানি শেষে জেলা জজ ছালেহ উদ্দিন আহমেদ আদালতে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আলমগীরের বিরুদ্ধে করা প্রথম মামলায় তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় আরও আসামি করা হয়েছে আলমগীরের স্ত্রী নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার নাজমুন নাহার, বোন আফরোজা আক্তার ও বন্ধু বিজন ভৌমিককে। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত মোট ৭ কোটি ১৭ লাখ ৩৫ হাজার ৬২৫ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। ওই সম্পদ ভোগদখল রেখে প্রতারণামূলকভাবে মানি লন্ডারিং-সম্পৃক্ত অপরাধ, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে লব্ধ অর্থের উৎস গোপনের লক্ষ্যে হেবা দলিল সম্পাদন, দলিলে জাল জালিয়াতি করেছেন। এ ছাড়া বেনামে সম্পদ অর্জন এবং ভুয়া প্রতিষ্ঠান মেসার্স ঐশী ট্রেডার্সের ব্যবসার আড়ালে মোট ২৭ কোটি ৮২ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৬ টাকা অবৈধভাবে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করেছেন।
মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, জেলা জজ আদালতের নাজির আলমগীরের অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট তথ্যের অভিযোগেই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আলমগীরের এসব অপকর্মে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী জুডিশিয়াল নাজির নাজমুন নাহার, বোন আফরোজা আক্তার ও বন্ধু বিজন ভৌমিক। মামলায় তাদেরও আসামি করা হয়েছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে দুদক কর্মকর্তা সুবেল আহমেদ বলেন, তারা সুনির্দিষ্ট তথ্যের আলোকে আদালতের একজন কর্মচারীকে গ্রেফতার করে আদালতে উপস্থাপন করেছেন। এখন আদালত তাকে জামিন দিয়ে দিলে তাদের কিছু করার নেই।
জামিন পাওয়ার পর নাজির আলমগীর হোসেন দাবি করেন, দুদক তার সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করতে বললে তিনি বিধি মোতাবেক তা দাখিল করেন। কিন্তু এরপরও দুদকের কর্মকর্তা তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি অব্যাহত রাখলে তিনি গত ৩১ জুলাই দুদকের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদকে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আইনি নোটিস দেন।
তিনি বলেন, আইনি নোটিসে দুদককে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দুদক কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে কল্পকাহিনী সাজিয়ে মামলা করেন এবং তাকে গ্রেফতার করেন। এতে তার সম্মানহানি হওয়ায় তিনি দুদকের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও উল্লেখ করেন।