ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে নাব্য সংকট

বন্ধের পথে জল বিদ্যুৎকেন্দ্র

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি
🕐 ৯:৪৮ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০১৯

শুষ্ক মৌসুমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়ায় বন্ধ হওয়ার উপক্রমে দেশের একমাত্র জল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। অন্যদিকে হ্রদে পানি কমে যাওয়া ও নাব্য সংকটে জেলা শহরের সঙ্গে ছয় উপজেলার লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে দুই মাস ধরে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ছয় উপজেলায় বসবাসরত প্রায় দুই লাখ ৭৫ হাজার মানুষ। এখন এ চরম দুর্ভোগের দিনে প্রকৃতির দিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এ টি এম আবদুজ্জাহের জানান, প্রতিবছরই এ সময়ে কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যায়। এবারের মতো কখনই পানি এত নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। আমাদের হ্রদে পানিভর্তি অবস্থায় পাঁচটি ইউনিটে প্রায় ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। পানি প্রবাহ কমে আসায় কিছুদিন আগেও দুটি ইউনিটে প্রায় ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। এখন হ্রদের পানি এত কম, মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। এক ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৩৬-৩৮ মেগাওয়াট। তাই আমরা এখন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।

জেলার গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম বৃহৎ বাজার মাইনী। এ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কামাল পাশা চৌধুরী জানান, ‘হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোট তো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহেন সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে প্রতি শনিবারের জমজমাট বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কাপ্তাই হ্রদে চলাচলকারী লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল ও যাত্রী পরিবহন সংস্থার জেলা সভাপতি মঈনুদ্দিন সেলিম জানান, জেলার এ ছয়টি উপজেলায় প্রায় ৪৫টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। দেড় মাস ধরে সব বন্ধ। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আমাদের প্রায় ১ হাজার ৩০০ শ্রমিক দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। মানুষের ভোগান্তিরও শেষ নেই। বৃষ্টি হওয়া ছাড়া আপাতত এর কোনো সমাধানও নেই। তিনি আরও বলেন, তবে বিআইডব্লিউটিএ এবং স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে যদি সুভলংয়ের একটি পয়েন্টে সামান্য ড্রেজিংয়ের কাজ করত তাহলে অন্তত নৌপথে লংগদু পর্যন্ত লঞ্চ চালু রাখা যেত। কিন্তু এ নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর কোনো মাথাব্যথা নেই।

এর আগে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ জানান, হ্রদে লঞ্চ চলাচল না হওয়ায় কিছুটা জনদুর্ভোগ বেড়েছে। তবে হ্রদ ড্রেজিংয়ের বিষয়ে জেলা প্রশাসন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় জেলা পার্বত্য রাঙ্গামাটি। ৬ হাজার ১১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনে বিস্তীর্ণ এ জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ছয়টির সঙ্গেই যোগাযোগের প্রধানতম মাধ্যম নৌপথ। প্রায় দুই মাস থেকে রাঙ্গামাটি শহরের সঙ্গে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা বাঘাইছড়িসহ লংগদু, জুরাছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি ও নানিয়ারচরের। হ্রদ সৃষ্টির ৬০ বছর পরও সড়ক পথ নির্মিত না হওয়া নৌপথই ভরসা এসব উপজেলার মানুষের। ফলে এসব উপজেলায় বসবাসকারী প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ ব্যাপক বিড়ম্বনায় পড়েছে।

ছয়টি উপজেলার মানুষের জীবন হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। পণ্য পরিবহন কিংবা যাতায়াতে সময় ও ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় বাড়ছে না পানি, কাটছে না সংকট। এদিকে, দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনও প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

 
Electronic Paper