ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আতঙ্কের জনপদ বাঘাইছড়ি

প্রান্ত রনি, রাঙ্গামাটি
🕐 ১১:৩৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০১৯

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে ফেরার পথে সাতজন নিহতের ঘটনার পর উপজেলাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনার পর থেকে উপজেলার রাস্তাঘাটে জনসাধারণের চলাফেরা কমে গেছে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় এখন সুনসান নীরবতা। সদরে দোকানপাট খোলা থাকলেও মানুষের উপস্থিতি কম। এলাকায় তৎপর রয়েছেন পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এখনো কোনো মামলা হয়নি। তবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে হামলাকারীদের ধরতে যৌথ অভিযানের কথা জানিয়েছেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় তারা স্থানীয়দের কাছে ঘটনার বিবরণ শোনেন। পরে উপজেলা সদরে জরুরি সভায় অংশ নেন। সভা শেষে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে সহায়তা প্রদান করা হয়।

মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ, জেলা পুলিশ সুপার আলমগীর কবীর, ৫৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আল হাকিম, ২৭ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুবুল ইসলামসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় স্থানীয়রা সন্ত্রাসীদের শাস্তির দাবি জানান। কর্মকর্তারাও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন।

এ বিষয়ে রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবীর বলেন, জড়িতদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এলাকার আতঙ্ক কাটাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টহল, চেকপোস্ট অব্যাহত থাকবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসীকেই ছাড় দেওয়া হবে না। পাহাড়ে যৌথবাহিনীর অভিযানের মধ্য দিয়ে অপরাধীদের ধরা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

বাঘাইছড়ির ওসি আবুল মনজুর বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক রয়েছে। ময়নাতদন্ত সম্পন্নের পর আমরা মামলার বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।

৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি
এদিকে ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান এ কমিটি গঠন করেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্তীকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। সদস্য সচিব করা হয়েছে রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলামকে। এ ছাড়া কমিটিতে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি, বিজিবি, পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং আনসার-ভিডিপির পাঁচজন প্রতিনিধি থাকবেন। আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনের সহায়তা
মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ৭ জনের পরিবার ও আহত ৩ জনকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘নিহতের পরিবারের কেউ চাকরি করার যোগ্য থাকলে চাকরির ব্যবস্থা করব।’ প্রাথমিকভাবে নিহত ৭ জনের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালে আহত তিনজনকে ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

এ হত্যাকাণ্ডের শোক ও নিন্দা জানিয়েছেন উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) প্রার্থী সুদর্শন চাকমা। এ ছাড়া পাহাড়ে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

এর আগে গত সোমবার রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার ভোটগ্রহণ শেষে ফেরার পথে সন্ধ্যায় নির্বাচন কর্মীদের ওপর দুর্বৃত্তদের সশস্ত্র হামলায় ব্রাশফায়ারে ঘটনাস্থলে ছয়জন নিহত হন। আহতদের মধ্যে ১১ জনকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন আরও একজনের মৃত্যু হয়।

 
Electronic Paper