ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভোট শেষে ফেরার পথে নির্বাচনকর্মীদের উপর গুলিবর্ষণ, নিহত ৭

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি
🕐 ১:০০ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০১৯

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে ভোট শেষে ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে উপজেলা সদরে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ব্রাশফায়ারে ভোটের দায়িত্বে থাকা সাতজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাঘাইছড়ি-দীঘিনালা সড়কের নয় মাইল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- পোলিং অফিসার স্থানীয় কিশলয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আমির হোসেন, চার আনসার ও ভিডিপি সদস্য মো. আল আমিন, মিহির কান্তি দত্ত, বিলকিস, জাহানারা বেগম, স্থানীয় মাদরাসার শিক্ষক আবু তৈয়ব। এ ছাড়া অপর একজনকে মিন্টু চাকমা হিসেবে শনাক্ত করেছেন স্থানীয়রা। হামলার শিকার সবাই কংলাক, মাচালং ও বাঘাইহাট এলাকায় নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন। সাজেক ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা শেষে চাঁদের গাড়িতে করে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে ফিরছিলেন তারা। বাঘাইছড়ির থানার ওসি এম এম মঞ্জুরুল আলম বলেন, চাঁদের গাড়িতে সন্ত্রাসীরা ব্রাশফায়ার করার সময় আনসার সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় প্রশাসনের গুলিতে মন্টু চাকমা নিহত হয়েছেন বলে আমাদের ধারণা। তবে স্থানীয় অনেকে মিন্টু চাকমাকে পথচারী বলে উল্লেখ করেছেন।

আহতদের মধ্যে ১৪ জনকে বিজিবির হেলিকপ্টারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাঘাইছড়ির ইউএনও নাদিম সরোয়ার। বাকি আহতরা বাঘাইছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

উল্লেখ্য, দ্বিতীয় দফার উপজেলা নির্বাচনে গতকাল রাঙ্গামাটির সাতটি উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে বাঘাইছড়ি উপজেলাও রয়েছে। হামলার দায়িত্ব এখনো কেউ স্বীকার করেনি। প্রশাসনও এখন পর্যন্ত দুর্বৃত্তদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি। বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ছিল না। পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দল সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও একই দল ভেঙে কয়েক বছর আগে গঠন করা জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) দুই প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। জেএসএস প্রার্থী বড়ঋষি চাকমা অনিয়মের অভিযোগ এনে গতকাল সকালেই নির্বাচন বর্জন করেন। নির্বাচনে এমএন লারমার প্রার্থী ছিল সুদর্শন চাকমা।

এমএন লারমাপন্থীদের অভিযোগ, অন্যদের প্রত্যাখ্যান
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা বলেন, ‘সন্তু লারমার জেএসএস’র বড়ঋষি চাকমা নিশ্চিত পরাজয় জেনে সকালে নির্বাচন বর্জন নাটক করার পর সন্ধ্যায় সরকারি কাজে নিয়োজিতদের ওপর এই নৃশংস হামলা চালিয়েছে।’ তিনি এই হামলার জন্য জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফকে দায়ী করেছেন।

তবে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) বাঘাইছড়ি উপজেলা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চাকমা বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্কও নেই। কারণ ওই এলাকায় আমাদের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। ওইটা পুরোটাই ইউপিডিএফের নিয়ন্ত্রিত এলাকা। আর আমরা যেহেতু সকালেই নির্বাচন বর্জন করেছি এবং লিখিতভাবে আমাদের অভিযোগ নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি, আমরা কেন এমন কাজ করব?’

অন্যদিকে ইউপিডিএফের মুখপাত্র মাইকেল চাকমা জানান, ‘এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের কাজ হতে পারে না। এই নির্বাচনে ওখানে আমাদের কোনো প্রার্থীও ছিল না। আমরা কেন এই কাজ করতে যাব?’

 
Electronic Paper