‘ঘরবাড়ি হারিয়ে বাপের বাড়িয়ে উঠেছি’
প্রান্ত রনি, রাঙ্গামাটি
🕐 ৫:১৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৬, ২০১৯
মাসুম, বয়স ৮ বছর। সকাল বেলার নাশতা সেরে ঘর থেকে বের হয়েছিল বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে। হঠাৎ শুনলো পাড়ায় আগুন লেগেছে। দৌড়ে হাফিয়ে আসতে-আসতে ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে যায় পুরো পাড়া। তখন দমকল বাহিনীর কর্মীরাও চেষ্টা চালাচ্ছেন আগুন নেভাতে। যে যেভাবে পারছেন ঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন; আগুন ততক্ষণে পুড়িয়ে খাক করে দিচ্ছে পুরো পাড়া।
গত রোববার রাঙ্গামাটি শহরের বাণিজ্যিক এলাকাখ্যাত রিজার্ভবাজার মসজিদ কলোনি নিজাম টিলায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৮৪টি বসতঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ ঘটনায় সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে পুরো পাড়ায় ৭৬টি পরিবার। রোববার আগুনের ঘটনার পর থেকেই ৭৬টি আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের বাসায়। এ ঘটনার পর থেকেই ক্ষতিগ্রস্তদের জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে নগদ অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পোড়া ভিটায় বসে রোদ পোহাচ্ছে ঘরের মালিক মতিমালা (৬০)। তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘যখন পাড়ায় আগুন লাগছে, তখন যে যার মতো করে ঘর থেকে বের হয়ে গেছি। নদীপথে কয়েকটা লঞ্চ এসেছে, যে যার মতো করে এক কাপড়েই লঞ্চে উঠেছি বাঁচার তাগিদে। পুরো পাড়ার কেউই কিছুই সরাতে পারেনি। একেবারে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে ৭৬টি পরিবার।’
মতিমালার সঙ্গেই বসে ছিলেন রেজিয়া বেগম (৬০) ও রাবেয়া বেগম (৬২)। তারাও দিলেন ওই দিনের ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা। বলেন, ‘বাবা, তুমি কও কেমনে কী সরামু? সবাই জান বাঁচাতেই দৌড়ে গিয়ে নৌকায় উঠেছে। আর তখন পুরো পাড়ায় চারদিকে আগুন আর আগুন। এখন আর কী করার আছে, দিনের বেলায় এখানে বসে থাকি। রাত হলেই যাই আত্মীয়-স্বজনের বাসায়।’
পাড়ায় ঢুকতে দেখা গেলে কয়েকটি সংগঠনের পক্ষ থেকে অগ্নিদুর্গতদের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। এর আগে স্থানীয় এমপি গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ সহায়তা প্রদান করেন। ওখানে কম্বল হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন মুন্নী আক্তার। তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন থেকেই কম-বেশ সহায়তা পাচ্ছে সবাই। কিন্তু এই সহায়তা তো সব ফিরে পাবো না। জানি না, এই সবকটি পরিবারকে উঠে দাঁড়াতে আরও কতদিন সময় লাগে।’
এ সময় কথা হয়েছিলো মিলন দাশ ও লিটন দাশের সঙ্গে। তারা জানান, এদিন সকালে আগুনের খবর পেয়েই ঘুম থেকে উঠলাম। বেরিয়ে দেখি চারিদিকে আগুন ছড়িয়ে গেছে। তাই দেরি না করে পরিবার নিয়ে এক কাপড়েই নৌকায় উঠলাম। এখনো এই এক কাপড়েই আছি।’
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে ফেরার পথে পিছন থেকে শিশু সন্তান কোলে নিয়ে ডেকে উঠেন এক নারী। বলেন, দাদা, আমার নামটাও লিখেন। নিজের নাম জানিয়ে বেবী দাশ বলেন, ‘ঘরবাড়ি হারিয়ে বাপের বাড়িয়ে উঠেছি। আবার ঘরবাড়ি বাঁধতে পারলে এখানেই আসবো।’