ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শূন্যরেখায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ মিয়ানমারের

ডেস্ক রিপোর্ট
🕐 ৩:১৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০১৯

আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে বাংলাদেশ সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ড বা শূন্যরেখায় কংক্রিটের স্থাপনা করছে মিয়ানমার। কক্সবাজারের ঘুমধুম সীমান্তবর্তী এলাকায় এ নির্মাণকাজ চলছে বলে সেখানে অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরে থাকা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা এ অভিযোগ করেছেন।

তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি কর্তৃপক্ষ আনাদোলুকে জানিয়েছে, সংবাদমাধ্যমে পাওয়া খবরটির সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। স্থানীয় জেলা প্রশাসনও ঘটনাটি মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়কে জানিয়েছে।

নো ম্যানস ল্যান্ড হলো এমন একটি স্থান যে জায়গার মালিকানা কোনো দেশের হাতে নেই। দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমারেখার মধ্যবর্তী স্থান এটি। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে ঘুমধুম সীমান্তের এ নো ম্যানস ল্যান্ডে অস্থায়ী ক্যাম্প বানিয়ে আশ্রয়ে আছেন। কিন্তু সেখানে মিয়ানমার স্থাপনা নির্মাণ করায় তারা জীবন নিয়ে ফের হুমকির মধ্যে পড়েছেন। আনাদোলুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করে ওই স্থাপনা নির্মিত হলে এলাকার তমব্রু খালের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হবে। তৈরি হবে বন্যার ঝুঁকি। এতে অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের বন্যার কবলে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

আনাদোলু খবরে আরও বলা হয়েছে, নো ম্যানস ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গাদের তাড়াতে বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার বাহিনীকে তৎপরতা চালাতে দেখা গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ কংক্রিটের স্থাপনা তৈরি করছে মিয়ানমার। এতে ওই এলাকায় রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য অনুপোযোগী হয়ে পড়বে। সেখানে থাকা রোহিঙ্গা নেতাদের অভিযোগ, তাদের উচ্ছেদে বাধ্য করতেই এ পদক্ষেপ নিয়েছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ করেন, ওই এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের তাড়ানোর জন্য নতুন এ কৌশল নিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার, নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার এবং মূল জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার আশা নিয়ে আমরা এখানে আছি।

বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান জানান, তিনি সম্প্রতি ব্যক্তিগতভাবে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সে সময় মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাকে জানিয়েছে, সেখানে কংক্রিটের অবকাঠামো নয়, বরং কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করা হচ্ছে। এ ধরনের কাঁটাতারের বেড়া বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যবর্তী অন্য সীমান্তরেখায়ও স্থাপন করা হয়েছে।

কর্নেল হাসান আনাদুলুকে বলেছেন, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ও সংক্রান্ত প্রতিবেদন নজরে এলেও কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণের বিষয় সম্পর্কে এখনো তিনি নিশ্চিত নন। তিনি জানিয়েছেন, এর সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে গবেষণাকর্ম চালিয়ে আসা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান আখন্দ এ ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে জানান। তিনি আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হওয়া ছাড়া কোনো দেশই নো ম্যানস ল্যান্ডে কোনো নির্মাণকাজ চালাতে পারবে না।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন।

 
Electronic Paper