ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ছাত্রলীগ নেতা মিরাজ হত্যা মামলায় ১২ আসামিই খালাস

মু.ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ, লক্ষ্মীপুর
🕐 ৭:২৭ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২৩

ছাত্রলীগ নেতা মিরাজ হত্যা মামলায় ১২ আসামিই খালাস

লক্ষ্মীপুরে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম মিরাজ খুনের মামলায় ১২ জন আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (২২ মে) লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি পিপি অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে একই দিন দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।

খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন, জাহাঙ্গীর, মুসলিম, নুরে হেলাল মামুন, তানজিল হায়দার রিয়াজ, রিয়াজ, জহির সর্দার, মোস্তফা কামাল, হারুন প্রকাশ ডাল হারুন, রফিক উল্যাহ সোহাগ, মাসুদ, সোহেল ও রাকিব হোসেন রাজু।

আদালত ও এজাহার সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে কেরোয়া ইউনিয়নের ভাঁটের মসজিদের অদূরে নির্জন এলাকায় মিরাজকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে খুন করা হয়। তার মাথা, কপাল, বুক ও পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কোপানোর চিহ্ন ছিল। এ সময় মিরাজের সঙ্গে থাকা মাসুদ ও সোহেলকেও আঘাত করা হয়। পরে ডাক্তারি প্রতিবেদনে বলা হয়, মাসুদ ও সোহেলের আঘাত সামান্য ছিল।

এদিকে, ২০১৬ সালের ৫ মে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও লক্ষ্মীপুর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপ-পরিদর্শক মোজাম্মেল হোসেন আদালতে ১২ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেন। এর আগে মিরাজ হত্যা মামলায় একাধিকবার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। মামলার প্রায় সাড়ে ৯ বছর পর তদন্ত, সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে এ রায় হয়েছে।

এদিকে, মামলাটিতে একাধিকবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। সবশেষ ২০১৬ সালের ১২ মে তদন্ত কর্মকর্তা ও লক্ষ্মীপুর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপ-পরিদর্শক মোজাম্মেল হোসেন আদালতে ১২ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিদের সঙ্গে মিরাজের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মিরাজের কাছে তাদের (আসামিদের) ব্যবসার তিন লাখ টাকা ছিল। ওই টাকা বণ্টন নিয়ে তার সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। হত্যাকাণ্ডের দুই-তিনদিন আগে আসামিরা মামলার বাদী মিরাজের বাবা আবুল কালামের মাছের দোকানে গিয়ে হামলা করেন। এসময় তারা মিরাজের খোঁজ করে হুমকি দিয়ে চলে যান। তখন তারা কালামকে স্থানীয় একটি খাবার হোটেলে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখান।

এর তিনদিনের মাথায় ঘটনার দিন ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর জহিরের বাড়িতে মিরাজকে ডেকে নিয়ে ব্যবসায়িক কথাবার্তা বলেন। পরে কৌশলে তাকে মোটর সাইকেলযোগে ভূঁইয়ারহাটের দিকে নিয়ে যান। মাসুদ ও সোহেল তার সঙ্গী হন। পরে মিরাজের অবস্থান নিশ্চিতের জন্য মাসুদ ও সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন অন্য আসামিরা। ভূঁইয়ারহাট থেকে ফেরার পথে বিকেলে কেরোয়া ইউনিয়নের ভাঁটের মসজিদের অদূরে নির্জন এলাকায় পৌঁছালে আসামিরা সংঘবদ্ধভাবে মিরাজকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন। ঘটনাস্থলে প্রচুর রক্তক্ষরণে মিরাজ মারা যান। তার মাথা, কপাল, বুক ও পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে কোপানোর চিহ্ন ছিল। মিরাজের সঙ্গে থাকা মাসুদ ও সোহেলকেও আঘাত করা হয়। পরে ডাক্তারি প্রতিবেদনে বলা হয়, মাসুদ, সোহলের আঘাত সামান্য ছিল।

আরও বলা হয়, আসামিদের মধ্যে মুসলিম, তানজিল হায়দার রিয়াজ, জাহাঙ্গীর ও নুরে হেলাল মামুন শুরু থেকেই পলাতক আছেন। এছাড়া মামলায় রিয়াজ, মোস্তফা কামাল, হারুন প্রকাশ, জহির সর্দার, রফিক উল্যাহ সোহাগ, রাকিব হোসেন রাজু, মাসুদ ও সোহেল বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হয়েছেন। পরে তারা জামিন নিয়ে মুক্ত হন। এরমধ্যে তানজিল হায়দার রিয়াজ, রাকিব হোসেন রাজু ও জহির সর্দার মূল পরিকল্পনাকারী বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

মিরাজের বাবা আবুল কালাম রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আসামিদের ফাঁসি হলে মিরাজের আত্মা শান্তি পেতো। আসামি রাজু, রিয়াজ ও জহির সর্দার পরিকল্পিতভাবে অন্যদের নিয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমাকে তারা আদালতে যেতে নিষেধ করছে। ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে হুমকি দিয়েছে। এতে আমি ও আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। আমি আসামিদের ফাঁসির জন্য হাইকোর্টে আপিল করবো।

মিরাজের ভাই রিয়াজ হোসেন বলেন, আমার ভাইকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার মৃত্যুর পর পুরো পরিবার তছনছ হয়ে গেছে। আসামিরা ডিবির ওসি পরিচয় দিয়ে আমার বাবাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। সেই কল রেকর্ডিংও আছে। তারপরেও কিভাবে সবাই খালাস পায় তা বুজে উঠতে পারছিনা।

বাদীর আইনজীবী মিজানুর রহমান মুন্সী বলেন, আমরা আদালতে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সাক্ষীদের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছিলাম। রাষ্ট্রপক্ষ ও আমি সুস্পষ্টভাবে আদালতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্পষ্ট করেছি। আশা করেছিলাম, আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। কিন্তু রায়ে সবাইকে খালাস দেয়া হয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো এই রায়ের বিরুদ্ধে। বর্তমানে কোনো আসামিই কারাগারে নেই। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত কয়েকজন আসামি শুরু থেকেই পলাতক রয়েছে।

হত্যার ঘটনার সময় লক্ষ্মীপুরসহ দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াত সরকারবিরোধী ব্যাপক সহিংস আন্দোলন করেছিল। হত্যাকাণ্ডের পরদিন জামায়াত নেতা হাফেজ ইউছুফ ও শিবির নেতা পরানসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। পরবর্তীকালে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বাদী ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। এসময় তিনি একটি সম্পূরক এজাহার দেন। এতে রাজু, হারুনসহ ১০ আসামির নাম উল্লেখ করেন। এজাহারে ঘটনার সময় মিরাজের সঙ্গে থাকা মাসুদ, সোহেলকেও আসামি করা হয়।

 
Electronic Paper