ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

চকরিয়ায় জলমহালে লবণাক্ত পানি; বোরো চাষে শঙ্কায় কৃষকরা

এম.মনছুর আলম, চকরিয়া
🕐 ৫:২০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০২২

চকরিয়ায় জলমহালে লবণাক্ত পানি; বোরো চাষে শঙ্কায় কৃষকরা

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় ঢেমুশিয়া জলমহালের বেশ কয়েকটি স্লুইসগেট পরিকল্পিতভাবে খুলে দেয়ায় প্রায় ৫ হাজার একর জমির বোরো চাষবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এতে লবনাক্ত পানির কারণে শীতের সবজি ক্ষেত বিবর্ণ হয়ে মরে যাচ্ছে। একটি প্রভাবশালী মহল স্লুইচগেট দিয়ে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ করার জন্য এ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে প্রান্তিক কৃষকরা জানান।

সরকার এ জলমহালটি মাছ চাষ করার জন্য তিন বছরের লীজ দিয়ে থাকে। এ জলমহাল ইজারা দিয়ে জেলা প্রশাসন লাখ লাখ টাকা আয় করছে। তবে শর্ত রয়েছে যে এই জলমহালে কোনোভাবেই লবনাক্ত পানি ঢুকিয়ে মাছ চাষ করা যাবে না।

ইজারাদাররা শর্ত ভঙ্গ করে মিঠা পানিতে পরিপূর্ণ খালে লবনাক্ত পানি ঢুকিয়ে মাছ চাষ করে যাচ্ছে। মিঠা পানির এ জলমহালে লবনাক্ত পানি ঢোকানোর সাথে সাথে ওই জলমহালে ভাসমান কচুরিপানা, সবজি ক্ষেত বিবর্ণ হয়ে মরে যাচ্ছে।

পশ্চিম বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বাবলা জানান, তার ইউনিয়নের উত্তরাংশ ও ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণাংশে প্রায় ৬ কিলোমিটার জুড়ে এ জলমহালটি বিস্তৃত। শত বছর ধরে উপজেলার পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, বিএমচর, পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার একর জমিতে এ জলমহালের মিঠা পানিতে কৃষকরা চাষাবাদ করে আসছেন।

তিনি জানান, ঢেমুশিয়া জলমহালের (বুড়া মাতামুহুরী খাল) মিঠা পানি দিয়ে বদরখালীসহ উপকূলীয় সাত ইউনিয়নে চাষাবাদ, মৎস্যচাষ, বাড়ির নিত্য কাজে পানি ব্যবহার করে আসছেন কয়েক হাজার কৃষক পরিবার।

তিনি বলেন, বোরো মৌসুমের চাষাবাদ শুরু পূর্বে কিছু অতিলোভী প্রভাবশালী ব্যক্তি খাল সংলগ্ন স্লুইস গেট খুলে দিয়ে লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ করার জন্য সমগ্র খালের পানি লবণাক্ত করে ফেলেছে। যার ফলে উপকূলীয় প্রায় ৫ হাজার একর আবাদি জমির চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে কৃষকেরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে মাতামুহুরি নদীর ‘পালাকাটা রাবার ড্যাম’ ফুলিয়ে ফুরঅইন মারা খাল দিয়ে মাতামুহুরি নদীর মিঠা পানি ঢেমুশিয়া খালে নিয়ে আসার পদক্ষেপ না নিলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হবে। না হলে প্রান্তিক চাষিরা দূর্বিসহ হয়ে পড়বে।

ডেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বলেন, জলমহালের ইজারাদাররা খালে লবণাক্ত পানি ঢুকানোর কারণে পানির রং বিবর্ণ হয়ে গেছে। এতে বোরো চাষ ও সবজি চাষ নিয়ে এলাকার প্রান্তিক কৃষকের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। প্রশাসন দ্রুত সময়ের মধ্যে কোন প্রদক্ষেপ না নিলে এলাকার হাজার হাজার প্রান্তিক কৃষক আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির পাশাপাশি কৃষকেরা পথে বসবে।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাসিম হোসেন বলেন, ঢেমুশিয়া জলমহালে লবণের পানি ঢোকানো খুবই দুঃখজনক। বোরো মৌসুমের চাষাবাদের পূর্বে হঠাৎ করে জলমহালে লবনাক্ত পানি ঢুকায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। জলমহালের লবনাক্ত পানি ঢুকানোর বিষয়টি কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে জানানো হবে বলে তিনি জানান।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, জলমহালের ইজারার শর্ত ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে জানানো হবে। মাতামুহুরী নদীর ওপর নির্মিত বাঘগুজারা ও পালাকাটা রাবার ড্যামের ব্যাগ ফুলানো দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

 
Electronic Paper