ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পদ পেতে খুনিদের দৌড়ঝাপ, বাকরুদ্ধ নিহত জনির মা

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
🕐 ৭:০১ অপরাহ্ণ, মে ২৭, ২০২২

পদ পেতে খুনিদের দৌড়ঝাপ, বাকরুদ্ধ নিহত জনির মা

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আবদুল মালেক চৌধুরী জনি হত্যার দীর্ঘ ১০ বছরেও মামলার সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রমও শেষ করতে পারেনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থা। আদৌ এঘটনায় বিচার পাবে কিনা এই নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় জনির পরিবারের সদস্যরা। গতকাল দুপুরে নগরের ফিরিঙ্গিবাজারস্থ নিজেদের বাসভবনে জনি হত্যার বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন জনির বৃদ্ধ মা খালেছা বেগম চৌধুরী। তবে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেও কোনো কথা বলতে পারেননি বাকরুদ্ধ এই মা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জনির ভাই আব্দুল মাজেদ চৌধুরী আমার মা আজ কথা বলতে পারছেন না, বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। ইশারায় বলছেন ‘বিচার চাইবো কার কাছে? বিচার তো পাচ্ছি না। আল্লাহর কাছে-ই বিচার দিলাম।’

আব্দুল মাজেদ চৌধুরী বলেন, আমরা নব্য কোনো আওয়ামীরীগ না। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক। মৃত্যুও আগ পর্যন্ত আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে গেছেন। ‘আমার ভাই দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিল। কিন্তু পদ-পদবিতে থাকা অন্য নেতারা মাদকাসক্ত ছিল। তাদের বাধা দেওয়ার কারণেই আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা মামলার এজাহার ও চার্জশিভুক্ত আসামি মো. ফারুক, আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ও মহিউদ্দিন মহি, এ এন এম ফরহাদুল আলম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ করছে। পোস্টার-ব্যানার টাঙিয়ে নিজেদের প্রচার-প্রচারণা করছে, যা দেখে আমরা ভীত-শঙ্কিত। এ ধরনের অপরাধীরা যদি পদ-পদবি পায় তাহলে হত্যা মামলা থেকে তারা পার পেয়ে যাবে।’

এ সময় আব্দুল মাজেদ ফরিয়াদ জানিয়ে বলেন, ‘খুনিরা যাতে যুবলীগের কোনো পর্যায়ে কোনো পদ না পায়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মঈনুল হোসেন খান নিখিল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈমসহ সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগকে একটি পরিচ্ছন্ন সংগঠনে রূপ দেওয়া হোক। বিনীত অনুরোধ করে বলছি, আমার ভাইয়ের খুনিরা যেন যুবলীগের কমিটিতে স্থান না পায়।’

উল্লেখ্য: ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হন আবদুল মালেক জনি। টানা চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পরবর্তীতে জনির ছোট ভাই আবদুল মাজেদ চৌধুরী ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে নগরীর কোতোয়ালী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এই মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয় পটিয়ার কুসুমপুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য আবু সাদাত মো. সায়েমকে। এ ঘটনার জেরে তাকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়। ঘটনার পর সায়েম দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। পরবর্তীতে হত্যা মামলাসহ ৩টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়। যদিও কিছুদিন পর তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন। সায়েম এখন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে সিভি জমা দিয়েছেন।

জনি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মো. ফারুক। পরবর্তীতে ফারুকসহ আরও ২ জন আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। কিন্তু নির্ধারিত দিনে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন। আসন্ন দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সম্মেলনে ফারুক সভাপতি প্রার্থী।

একই মামলার এজাহারভূক্ত আসামি মহিউদ্দিন মহিও (পটিয়া উপজেলার কুসুমপুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা) দক্ষিণে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী। হত্যা মামলায় জড়িয়ে পড়ায় সেসময় তাকে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে মহি’র বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ নেতা জনি হত্যা মামলাসহ দুটি মামলায় গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি হয়। এরপর গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে আসেন মহি।

 
Electronic Paper