ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটনকেন্দ্র

সন্ধ্যা হলেই তাড়ানো হয় পর্যটকদের

মো. নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার
🕐 ১:৩৬ অপরাহ্ণ, মে ১৪, ২০২২

সন্ধ্যা হলেই তাড়ানো হয় পর্যটকদের

সন্ধ্যা হলেই পর্যটন এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেন পর্যটকদের। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আনসার বাহিনীর সদস্যরা বাঁশি বাজিয়ে পর্যটকদের উপবন এলাকার বাইরে বের করে দিতে দেখা গেছে। এমনটি করার কারণ হিসাবে পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে করা হচ্ছে বলে জানায় উপজেলা প্রশাসন।

চট্টগ্রাম বিভাগের একমাত্র উপবন পর্যটনকেন্দ্র বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যটন লেক। সেখানে প্রতিদিন শত শত পর্যটক প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গেলেও বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগেই আনসার পুলিশের বাশির সঙ্গে সঙ্গে পর্যটন এলাকা খালি করে নেমে আসতে হয়। এভাবে চলছে প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যটনকেন্দ্র।
তবে স্থানীয়রা বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছে, যদি পর্যাপ্ত লাইটিং করা হয় তবে দিনের চাইতে রাতে এখানে পর্যটক বেশি হবে। কারণ প্রকৃতির কাছে থাকার জন্য পর্যটকরা হাজার হাজার টাকা খরচ করে এখানে বেড়াতে আসে। যদি লাইটিং করা হয় তবে পর্যটক বাড়বে সেই সঙ্গে সরকার রাজস্ব খাতেও আয় বাড়বে। কক্সবাজার থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির দূরত্ব বেশি না হওয়ার কারণে কক্সবাজারে আসা অনেক পর্যটক পাহাড় প্রকৃতি দেখতে নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুরতে আসে।

সন্ধ্যা হলেই তাড়ানো হয় পর্যটকদেরসন্ধ্যার পর বাতির ব্যবস্থা না থাকা ও পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন না করার কারণে পর্যটকরা নিরাপদ নয় বলে দাবি স্থানীয়দের। জেলা পরিষদ ডাক বাংলো থেকে উপবন এলাকা পুরো লাইটিং ও নিরাপত্তার জন্য পুলিশ চৌকি বসানো হয়; তবে পর্যটকরা রাতেও সময় কাটাতে পারবে। তারা আরো বলেন, নাইক্ষ্যংছড়িতে শুধু লেক নয়; দেশের একমাত্র গয়াল গবেষণা কেন্দ্র, শৈলচূড়া, প্রাচীন মন্দির, চা বাগান, প্রাকৃতিক ঝর্ণাসহ এখানে দেখার আরো অনেক কিছু রয়েছে। যদি পর্যটক এখানে অবস্থান করে তবে নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যটন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। তৈরি হতে পারে পর্যটক উদ্যোক্তা।

সম্প্রতি দৈনিক খোলা কাগজ কক্সবাজার প্রতিনিধি নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটনকেন্দ্র দেখতে গেলে সেদিন শত শত পর্যটক দেখতে পায়। সবাই ঝুলন্ত ব্রিজ থেকে শুরু করে সবে নির্মিত ওয়াচ টাওয়ারে উঠে প্রকৃতি দেখা, লেকের পানিতে নৌকায় চড়া, সবাই যেন বেশ ভালো সময় কাটাচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই আনসার পুলিশের বাঁশির আওয়াজ শুনে প্রতিবেদক জানতে চাইলে দায়িত্বরত এক আনসার সদস্য জানান, সন্ধ্যা ৬টার পর আমরা উপবন পর্যটন এলাকা বন্ধ করে দিই।

দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৯ বছর। আর নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটনকেন্দ্রটি গড়ে উঠেছে প্রায় ২৯ বছর হলো। প্রশাসন ও স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরে প্রায় ছয় একর পাহাড়ি এলাকাজুড়ে ১৯৯১ সালে উপবন পর্যটনকেন্দ্রটি গড়ে তোলে উপজেলা প্রশাসন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে তৎকালীন ই্উএনও আকরাম খান এ পর্যটনকেন্দ্র করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কক্সবাজার থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটারের দূরে এই লেকটি অবস্থিত। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে জেলা পরিষদ ডাক বাংলো ঘেঁষে উপবন লেকের অবস্থান। এ স্থানটি ইকো ট্যুর ও পিকনিক স্পট হিসেবে বেশ পরিচিত। এখানে মাছধরা ও নৌকা ভ্রমণের সুবিধা রয়েছে। রয়েছে পাহাড়কন্যা নাইক্ষ্যংছড়ির মনোরম ছায়ানিবিড় সৌন্দর্য অবলোকনের সুযোগ। যা আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এখানে বনের মাঝে গড়ে তোলা হয়েছে আকাশ বাড়ি, পিকনিকের জন্য ছোট্ট বেশ কয়েকটি ঘর। চারদিক সবুজ অরণ্য ঘেঁষে পাহাড় চূড়ার ওপর প্রাকৃতিক হ্রদ।

সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচি থাকাকালীন তিনি উপবন লেককে আরো সুন্দর ও পর্যটক আকৃষ্ট করতে পানির পোয়ারা, ইকো টুরিজ্যম, পর্যটকরা যেন বসতে পারে তেমন কিছু স্পটসহ বেশকিছু উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলেন। এমন দৃষ্টিনন্দন রূপ যেকোনো মানুষকে মুগ্ধ করলেও সন্ধ্যার পর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক পর্যটক রাতের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা থেকে বঞ্চিত বলে জানান।

কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক রুমি জানান, এসেছিলাম কক্সবাজার। নাইক্ষ্যংছড়ির অপরূপ সুন্দর্যের কথা শুনে এসেছিলাম। বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে লেকটি। তবে সন্ধ্যার আগেই লেক ছাড়তে হলো। এখানে থাকার ব্যবস্থাও বেশ ভাল ছিল। লেক থেকে নামতেই জেলা পরিষদের বাংলো রয়েছে। কিন্তু তারা যখন রাতে সেখানে ডুকতে দিচ্ছেনা সে কারনে কক্সবাজার ফিরে যাচ্ছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পর্যটন লেকের পাশের এক স্থানীয় জানান, যদি ডাক বাংলো থেকে লেক পর্যন্ত আঁকাবাঁকা সড়কে সড়ক বাতি দেওয়া হয় তবে পর্যটন এলাকা যেমন সুন্দর হবে ঠিক তেমনি রাতে পর্যটক এখানে অবস্থান করলে চাহিদা অনুযায়ী হোটেল মোটেল জোন সৃষ্টি হবে।

এব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌসির সাথে কথা হলে তিনি জানান, নিরাপত্তার কথা বিচেনা করে আমরা এখন সন্ধ্যার পর লেক বন্ধ রাখছি। যদি উপবন উন্নয়ন খাতে বারদ্দ আসে তবে পর্যটকদের সেখানে থাকার এবং লাইটিং এর ব্যবস্থা করা হবে। এই ঈদে থানা থেকে পুলিশ পোর্স চেয়েছিলাম ৮ থেকে ১০ জন। লোকবল কম থাকিার কারণে মাত্র দুজন পুলিশ নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত ছিল। সাথে কিছু অদক্ষ আনচার কর্মী দিয়ে পর্যটক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে হয়েছে।

 
Electronic Paper