ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সোনাগাজীতে ভোজ্যতেল ও নিত্যপণ্যের বাজার বেসামাল

হোটেল ব্যবসায় ধস

ফেনী প্রতিনিধি:
🕐 ১:১০ অপরাহ্ণ, মে ১৪, ২০২২

 সোনাগাজীতে ভোজ্যতেল ও নিত্যপণ্যের বাজার বেসামাল

করোনা মহামারির কারণে কাবু হয়ে সব পেশার মানুষের আয় কমে যাওয়ায় এবং ধার-দেনায় জীবনযাপনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এ টানাপোড়েনের মধ্যে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট ও নিত্যপণ্যের মূল্য ধাপে ধাপে বেড়ে চলায় সংসার চালাতে গিয়ে দিশেহারা অবস্থা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর।

ফেনীর সোনাগাজী পৌর শহরে ছোট একটি খাবারের হোটেল চালান শাহ জাহান নামে একব্যক্তি। হোটেলে ভাত বিক্রির পাশপাশি শিঙাড়া, পুরি, ছোলা, আলুর সপ, বেগুনী, কাঁচা বুট, পরটা ও ভাজিসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য বানিয়ে বিক্রি করেন। কয়েকমাস আগেও দোকান ভাড়া এবং কর্মচারীরর বেতন ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আয়। কিন্তু শাহ জাহানের এখন এই দোকান থেকে ৩০০-৫০০ টাকা আয় করাই কঠিন হয়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে ভোজ্যতেলের সংকট এবং নিত্যপণ্য, আটা, ময়দা ও ছোলাসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি।

শাহ জাহান বলেন, তার দোকানের খাবার তৈরীর মূল উপকরণ হলো সয়াবিন তেল আর আটা-ময়দা। ১০ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল এখন ২১০-২৩০ টাকা। ২২ টাকা দরের আটা ৪৫ টাকায় আর ৪০ টাকার ময়দা ৬০ টাকা হয়ে গেছে। এলপি গ্যাসের (সিলিন্ডার) দাম কমলেও খুচরা পর্যায়ে তাঁর প্রভাব পড়েনি। ফলে সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে। এ অবস্থায় শিঙাড়া, পুরি, পরটার আকার ছোট করলে খরচ কিছুটা কমে যেতো। কিন্তু এমন করলে ক্রেতারাতো খেতে আসবেন না। দিন শেষে যে আয় থাকে, তা দিয়ে তাঁর মতো গরিবের সংসার তো আর চলে না।

শুধু শাহজাহান নন, পৌরশহরের কলেজ রোডের ক্ষুদ্র খাবার ব্যবসায়ী নুরুল করিমের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের এখন দুঃসময় চলছে। খাবার তৈরীর উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকের আয় কমে গেছে। ক্রেতা ধরে রাখতে তারা খাবারের দাম বা আকারে বড় পরিবর্তন আনতে পারছেন না। তেল না পেয়ে অনেকে আপতত দোকানে ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করেছেন।

শনিবার পৌর শহরসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলু, গাজর, পটল, লাউ, মুলা, ঝালিকুমড়া, কাঁচা পেঁপে, চিচিংগা, পেঁয়াজ, রসুন, টমেটো, করলা, শসা, কাঁচামরিচ, ঢ্যাঁড়শ, বেগুন, বরবটি শিম, আকরি, কচু, মিষ্টি কুমড়াসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ১০-১৫ টাকা বেড়ে গেছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজার তদারকি না থাকায় বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে পণ্য পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি হওয়ায় ঠিকমত পণ্যের সরবরাহ হচ্ছে না। তাই পাইকারী ও খুচরা বাজারে দাম কিছুটা বেড়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে বাজারগুলোতে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ১০-১৫ টাকা বেড়ে গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানায়, বৃষ্টির কারনে পাইকারী বাজারে প্রত্যেক পণ্যের দাম বাড়ায় তাঁরাও বাড়িয়েছেন। এছাড়া পোল্ট্রি খামারের ডিম প্রতি হালি ৩৬ টাকা, দেশীয় মুরগির ডিম প্রতিহালি ৭০ টাকা, হাঁসের ডিম প্রতিহালি ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে বয়লার মুরগী কেজি ১৯০-২০০ টাকা, কক সোনালী মুরগী কেজি ২৯০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে বেড়েছে মসুর ডাল, খেসারির ডাল, সয়াবিন, চালসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম। উপজেলার আরও বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে সবজি ও নিত্যপণ্যের একই চিত্র দেখা গেছে।

নূরুল আলম নামের এক ব্যবসায়ী জানান, পাইকারী বাজারে তাদেরকে প্রতিটি পণ্য আগের চেয়ে ১০-২০ টাকা বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে পরিবহণ খরচও অনেক বেড়েছে। আবার অনেক বড় ব্যবসায়ী পণ্যগুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরী করছেন।

তিনি বলেন, সয়াবিন তেলের সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় তিনি সয়াবিন তেল আপতত বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।

সোনাগাজী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নূর নবী বলেন, প্রশাসনিক তদারকির অভাবে দ্রব্যমূল্যের বাজার অস্থির হওয়ায় ক্রেতারা ভুক্তভোগী হচ্ছেন। বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে যারা কোন একটা অযুহাত পেলে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।

জানতে চাইলে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) লিখন বনিক বলেন, তিনি নিয়মিত বাজারগুলো পরিদর্শন করে নিত্যপণ্য ও ভোজ্যতেলের নাম ঠিক রাখার লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করছেন। কোন ব্যবসায়ী অবৈধভাবে গুদামজাত করে সয়াবিন তেলের সংকট তৈরী করলে এবং বেশি দামে বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 
Electronic Paper