চাঁদায় অতিষ্ঠ নীলক্ষেত
দোকান দখলের অভিযোগ, ফুটপাত থেকেও তোলা হয় চাঁদা, আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
রাজধানীর নীলক্ষেতে চলছে জমজমাট চাঁদাবাজি। ফুটপাত দখলে নিয়ে বসানো হয়েছে দোকান। সেখান থেকেও তোলা হয় চাঁদা। বিভিন্ন ফুটপাত থেকে দৈনিক দোকান প্রতি তোলা হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা। চাঁদা তোলার কাজে নিযুক্ত রয়েছেন বেশ কয়েকজন। যারা দোকানিদের কাছে ‘লাইনম্যান’ হিসেবে পরিচিত। ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার ছত্রছায়ায় এসব হচ্ছে দাবি করে অভিযোগ করেন তারা। যদিও অভিযুক্ত বিপ্লব সরকার মুঠোফোনে ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করে ‘অপপ্রচার’ বলে দাবি করেন।
অভিযোগসূত্র বলছে, নীলক্ষেত ও চাঁদনীচক এলাকার বিভিন্ন ফুটপাতে আট শতাধিক দোকান রয়েছে। বেশিরভাগ দোকান রাস্তা পর্যন্ত দখল করে বসানো। এসব দোকান থেকে দিনপ্রতি নিম্নে ২০০ টাকা হারে মাসে অর্ধকোটি টাকার চাঁদাবাজি চলছে। এ কাজে ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকারের শ্যালক রনিও জড়িত। ইতোমধ্যে তিনি নীলক্ষেতে তিন দোকান দখলে রেখেছেন। সেই দোকান ফিরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেছেন বলে রয়েছে অভিযোগ।
ভুক্তভোগী মোজাম্মেল হক জানান, ইসলামিয়া মার্কেটে ৩৫০ নম্বর দোকান দখলে রেখে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন বিপ্লব সরকারের শ্যালক। পরে বিপ্লব সরকারের কাছে রনির বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েও বিচার পাননি বলে দাবি মোজাম্মেলের। পরে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ডিএমপি পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগ জানান। তাতেও কোনো সুরাহার পথ দেখছেন না এ ভুক্তভোগী। এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করলে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে নিউমার্কেট এলাকায় টানা অভিযান চালিয়ে হকার উচ্ছেদ করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এরপর কয়েক মাস হকারমুক্ত ছিল ফুটপাত। পরে ধীরে ধীরে ফুটপাতগুলো আবারও হকারদের দখলে চলে যায়। মাঝে মধ্যে অভিযান হলে হকাররা সরে পড়ে। অভিযান শেষে আবারও ফুটপাতের অবস্থা যা, তাই হয়। ফুটপাতের এমন হাল-হকিকতের প্রশ্নে নিউমার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, নূরজাহান মার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনীচক মার্কেটের আশপাশে হকারদের সঙ্গে কথা বলা হয়।
নাম না প্রকাশ শর্তে তাদের অনেকে জানান, ‘লাইনম্যান’দের সহযোগিতায় তারা ফুটপাতে দোকান বসিয়েছেন। নিয়মিত চাঁদা দিয়েই এসব এলাকায় ব্যবসা করছেন তারা। এর মধ্য দিয়েই উঠে আসে আওয়ামী লীগ নেতা বিপ্লব সরকারের নাম। ফুটপাতে হকার বসানোর জন্য তার লোকজনকে নাকি দিতে হয়েছে ২০ হাজার করে টাকা। আরও উঠে আসে কিলার সোহেল রানা ও মুন্নার নাম। এছাড়া আরও অনেকের নাম বলতে চাননি তারা।
গাউছিয়ার সামনের ফুটপাতে ছোটদের জামাকাপড় বিক্রি করেন আলী আহমেদ। তিনি জানান, দোকান প্রতি প্রতিদিন ইব্রাহিম হোসেন ইবু ও তার ভাই নূর ইসলাম সাত্তার মোল্লাকে দিতে হয় ৩০০ টাকা। এ টাকা নিউমার্কেট থানার সাধারণ সম্পাদক হানিফ মিয়া ও বিপ্লব সরকারের কাছে যায়। প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। তাই বলেও লাভ নেই।
নিউমার্কেট ওভারব্রিজের পাশে ফুটপাতে মেয়েদের জামা-কাপড় বিক্রেতা কামাল হোসেন জানান, আওয়ামী লীগ নেতা বিপ্লব সরকারে নেতৃত্বে এই ২০ জন লাইনম্যান আছেন এই লাইনম্যান দ্বারা পরিচালনা করেন ফুটের টাকা। সন্ধ্যার পর চারশ’ করে টাকা দিতে হয়।
তিনি বলেন, লাইনম্যানদের পিছনে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা রয়েছেন। ফুটপাতের চাঁদার টাকার ভাগ সবাই পান। এরাই লাইনম্যানদের শক্তি জোগায়। টাকা না দিলে লাইনম্যানরা ওই স্থানে আরেকজনকে বসিয়ে দেয়।
আরও কয়েকজন হকার বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা বিপ্লব সরকার বাণিজ্য বিতান মার্কেটের অফিস দখল করে নিজস্ব মাল্টিপার্পাস কার্যক্রম চালান। একটি অফিস আছে বাণিজ্য বিতান মার্কেটের দ্বিতীয় তলায়। টাকা না দিলে সেই অফিসে আমাদের নিয়ে গিয়ে টর্চার করেন।
এ বিষয়ে বিপ্লব সরকারের সঙ্গে তার মুঠোফোনে কথা হলে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে তিনি বলেন, আমি কোথাও কোনো দখলবাজি বা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নই। একটি প্রতিপক্ষ গ্রুপ আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করার জন্য এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ এলে নিশ্চয় বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ সত্য হলে প্রয়োজনে হাইকমান্ডকে জানানো হবে।’
দোকান দখল প্রসঙ্গে বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলা হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট মার্কেটের কমিটির সঙ্গে কথা বলা হবে।’