ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাজধানীর আইসিইউ ঘিরে হাহাকার

সরকারি হাসপাতালে ফাঁকা মাত্র ৫৭টি, রোগীতে পূর্ণ ১২ বেসরকারি হাসপাতাল, এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু-শনাক্ত ঢাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১২:৫৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০২১

রাজধানীর আইসিইউ ঘিরে হাহাকার

রাজধানী ঢাকায় করোনা রোগীদের জন্য ফের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) নিয়ে তৈরি হয়েছে হাহাকার। গতকাল রোববার বিভিন্ন জেলায় হাসপাতালে জায়গা না থাকায় রোগীরা ভিড় করেন রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলোতে ছিল আইসিইউ সংকট। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) আইসিইউতে সিট খালি না থাকায় ফিরে যান রোগীরা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঢাকার সরকারি হাসপাতালে ফাঁকা ছিল মাত্র ৫৭টি সিট। আর রোগীতে পূর্ণ ছিল ১২ বেসরকারি হাসপাতালই।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, রাজধানীতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া ১৬ হাসপাতালে আইসিইউ বেড ফাঁকা রয়েছে মাত্র ৫৭টি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, রাজধানী ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড ১৬ হাসপাতালগুলোর মধ্যে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা হলেও সেখানে তাদের জন্য আইসিইউ নেই।

বাকিগুলোর মধ্যে রাজধানীর করোনা ডেডিকেটেড কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ১০ বেড, সরকার কর্মচারী হাসপাতালের ছয় বেড, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০ বেড, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৪ বেড, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০ বেড আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ বেডের সবগুলোতে রোগী ভর্তি রয়েছে।

বাকি হাসপাতালগুলোর মধ্যে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের ২৬ বেডের মধ্যে একটি, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের ১৬ বেডের মধ্যে একটি, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ১৫ মধ্যে দুইটি, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের আট বেডের মধ্যে একটি, টিবি হাসপাতালের ১৬ বেডের মধ্যে ১২টি, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের ১০ বেডের মধ্যে চারটি ও ডিএনসিসি ডেডিকেটেড হাসপাতালের ২১২টি আইসিইউর মধ্যে ফাঁকা রয়েছে মাত্র ৩৬ বেড। অর্থাৎ রাজধানী ঢাকার সরকারি করোনা ডেডিকেটেড ১৬ হাসপাতালের ৩৯৩টি আইসিইউ বেডের মধ্যে মাত্র ৫৭টি বেড ফাঁকা রয়েছে।

সংক্রমণের সংখ্যা কিছুতেই কমছে না জানিয়ে অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেছেন, যেখানে গত দুই মাস আগেও সারা দেশে সাধারণ শয্যা এবং আইসিইউ বেড খালি ছিল সে সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। রোবেদ আমিন জানান, যে হারে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে করে যদি হাসপাতালের বিদ্যমান চাপ চলতেই থাকে তাহলে আগামী সাত থেকে ১০ দিন পর আর হাসপাতালের বেড খালি থাকবে না।

এদিকে দেশে রোগী সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চলছে। মাঝে এক দিন বাদ দিয়ে আবার টানা দুই দিন ধরে করোনাতে এক দিনে মৃত্যু ২শ’ পার করেছে। তার আগে একটানা পাঁচ দিন করোনাতে আক্রান্ত হয়ে দুইশো’র বেশি রোগী মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এবং মৃত্যুর এই মিছিলের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানাচ্ছে, রাজধানীর করোনা ডেডিকেটেড ২৮ হাসপাতালের মধ্যে ১২ হাসপাতালেই আইসিইউ ফাঁকা নেই। বাকি হাসপাতালগুলোতেও বেড সংখ্যা ফাঁকা রয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, বেসরকারি ২৮ হাসপাতালের মধ্যে আসগর আলী হাসপাতালের ১৮ বেড, ইবনে সিনা হাসপাতালের ১০ বেড, ইউনাইটেড হাসপাতালের ২২ বেড, এ এম জেড হাসপাতালের ১০ বেড, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের আট বেড, গ্রিন লাইফ হাসপাতালের ১০ বেড, ল্যাব এইড হাসপাতালের সাত বেড, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪২ বেড, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২১ বেড, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের আট বেড, হাই কেয়ার হাসপাতালের ১০ বেড ও আল মানার হাসপাতালের ছয় বেডের মধ্যে সবগুলোতে বেডে রোগীতে ভর্তি।

বাকি হাসপাতালগুলোর মধ্যে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬ বেডের মধ্যে ১৬টি, স্কয়ার হাসপাতালের ২৮ বেডের মধ্যে আটটি, এভার কেয়ার হাসপাতালের ২১ বেডের মধ্যে দুটি, ইমপালস হাসপাতালের ৫৬ বেডের মধ্যে ১০টি, জাপান ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১২ বেডের মধ্যে আটটি, হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ১৫ বেডের মধ্যে একটি, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪০ বেডের মধ্যে ছয়টি, সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২২ বেডের মধ্যে ১১টি, জয়নুল হক সিকদার ওমেন্স মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের ১২ বেডের মধ্যে তিনটি, ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০ বেডের মধ্যে একটি, বেটার লাইফ হাসপাতালের ২৪ বেডের মধ্যে ১৬টি, কমফোর্ট হাসপাতালের আট বেডের মধ্যে দুটি, ফেমাস হাসপাতালের ১২ বেডের মধ্যে আটটি, বিআইএইচএস হাসপাতালের ১৬ বেডের মধ্যে দুটি, সাজেদা হাসপাতালের ছয় বেডের মধ্যে একটি আর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের পাঁচ বেডের মধ্যে পাঁচটিই ফাঁকা রয়েছে। অর্থাৎ স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, বেসরকারি ২৮ হাসপাতালের ৮৭৮টি আইসিইউ বেডের মধ্যে মাত্র ১৫৭টি বেড এই মুহূর্তে ফাঁকা রয়েছে।

 
Electronic Paper