ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

টুং টাংয়ে মাতোয়ারা ঢাকার কামারশালা

তুষার আহসান
🕐 ৬:২১ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৮, ২০২১

টুং টাংয়ে মাতোয়ারা ঢাকার কামারশালা

দিনরাত চলছে হাঁফর। আঁধারে সেখানে ফুটে আছে আগুনের লাল আলো। আর সঙ্গে টুং টাং আওয়াজ। কোরবানির ঈদ এলেই এমনই ব্যস্ততা দেখা মেলে কামারপট্টিতে। কারওয়ানবাজারের কামারপট্টিও ব্যতিক্রম নয়। প্রতিবার আরও আগে জমে ওঠে বেচাবিক্রি। কিন্তু গতবার ও এবারের লকডাউন চিন্তায় ফেলেছে তাদের। তবে ঈদের আগের এ তিনদিন বাজার চাঙ্গা হবে বলে মনে করছেন ‘আশাবাদী কামাররা’। তবে নিরাশার কথা ভাসছে তাদের মধ্যে।

ঢাকার কারওয়ানবাজার ও নবাবগঞ্জের কামারপট্টিতে গিয়ে দেখা যায়, কয়লার আগুনে লোহা পুড়িয়ে তাতে হাতুড়ি পেটা করে দা, বঁটি, ছুরি ও চাপাতি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামাররা। তবে দু বছর আগে যেমন ব্যস্ততা ছিল, ততোটা নেই। অনেকে আবার পেশা বদলেছেন বলেও শোনা গেছে। এদিকে যতটুকু ব্যস্ততা রয়েছে এবং সেই ব্যস্ততায় যে পরিমাণ জিনিস তৈরি হচ্ছে সে পরিমাণ ক্রেতা নেই। অনেকটাই ফাঁকা কাটে গতকালের এ দুই কামারপট্টি।

দোকানিদের দাবি, করোনার কারণে মানুষের আয় কমেছে। এদিকে লকডাউন উঠেছে তিন দিন হলো। এরই মধ্যে অনেকে কাজ হারিয়েছেন। চাকরি নেই বলে বাড়ি চলে গেছেন। অনেকেই কোরবানি দিচ্ছেন না। ফলে বাজারে তার প্রভাব পড়েছে।

নবাবগঞ্জের দোকানি যতিন্দ্র কর্মকার বলেন, কোরবানি ঈদের একমাস আগে থেকেই দা, ছুরি, বঁটি, চাপাতিসহ নানা ধরনের হাতিয়ার তৈরির কাজ শুরু হতো।

পাশাপাশি থাকতো পুরাতন হাতিয়ারের মেরামতের কাজ। সব মিলিয়ে প্রায় লাখ টাকার বেচাবিক্রি হতো কিন্তু লকডাউনের কারণে সব শেষ। এবার যে ব্যস্ততা দেখছেন তাকে ব্যস্ততা বলা চলে না। ঈদের তিন দিন বাকি। এ সময় চোখেমুখে ঘুম থাকতো না। আগে প্রায় ১ মাস জুড়ে কাজ করতাম দিনরাত। খাওয়ার সময়টুকুও পেতাম না।

তাপস কর্মকার নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আগে এ সময়ে কামারশালার সামনে বিক্রি করার জন্য সাজানো থাকতো কোরবানি করার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। বিক্রি শুরু হতো কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই। এবার ঈদ ঘনিয়ে এলেও বেচাবিক্রি নেই।

কারওয়ানবাজারের দোকানি সোহাগ বলেন, এ বছর ব্যবসার অবস্থা ভালো না। গত বছর ঈদের পাঁচ দিন আগে থেকেই প্রতিদিনই ৩০ হাজার টাকার বিক্রি হতো। এ বছর তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

জানা গেছে, কারওয়ানবাজার কামারপট্টিতে ১২টি দোকানে কামাররা দা, বঁটি, ছুরি ও চাপাতি তৈরি করছেন। তাদের তৈরি এসব পণ্য বিক্রি হয় ছোট-বড় মিলিয়ে ৫৩টি দোকানে। সাধারণ একজন কামারের সঙ্গে দুই থেকে তিন জন হেলপার থাকে। আর দোকানগুলোতে ঈদ মৌসুমে তিন থেকে চারজন কাজ করেন। সব মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক লোকের কর্মসংস্থান রাজধানীর এই কামারপট্টিতে। কিন্তু বেচাকেনা কম হওয়ায় সবার চোখেমুখে হতাশার চাপ।

কামারপট্টি ঘুরে জানা যায়, লোহার মানের ওপর ভিত্তি করে তাদের তৈরি করা পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়। রেলের স্পিং পাতি লোহার মান সবচেয়ে ভালো। এ লোহার এক কেজি ওজনের চাপাতি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গাড়ির লোহার তৈরি এক কেজি ওজনের চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকায়, কাঁচা লোহা দিয়ে তৈরি এক কেজি ওজনের চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। এর বাইরে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে মাংস কাটার ভালো চুরি, ৮০০ টাকা থেকে এক হাজারের মধ্যে গরু জবাইয়ের ছুরি পাওয়া যাচ্ছে। হাড় কাটার দেশি কুড়াল পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ টাকায় এবং চাইনিজ কুড়াল পাওয়া যাচ্ছে ৪০০ টাকায়। এছাড়া দা-বঁটির পাশাপাশি আরও কয়েক রকমের ছুরি পাওয়া যাচ্ছে।

 
Electronic Paper