নতুন নতুন নেশায় আকৃষ্ট করতে তাদের ল্যাবে চলত গবেষণা: র্যাব
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:৪৩ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২১
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, কয়েক বছর আগে রাজধানীর উত্তরায় বায়িং হাউজের আড়ালে ‘আইস’ নামে নতুন মাদকের ব্যবসা করে আসছিলে অভিযুক্ত তৌফিক হোসেন। র্যাবের হাতে সেসহ আরও ৬ জনকে গ্রেপ্তারের পর বেড়িয়ে আসে এ মাদক বিস্তারের ভয়ঙ্কর তথ্য। নতুন নতুন নেশায় মাদক সেবীদের আকৃষ্ট করতে তাদের তৈরি ল্যাবে চলতো গবেষণা।
শুক্রবার বিকালে (১৮ জুন) রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তাদের আস্তানায় মাদক সেবন করতে আসা শিক্ষার্থীদের অশ্লীল কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ দিয়ে একপর্যায়ে তাদের নগ্ন ভিডিও ধারণা করে ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিতো মোটা অঙ্কের টাকা। মানসম্মানের ভয়ে ওইসব তরুণ-তরুণীরা কাউকে ঘটনার বিষয়ে কিছুই বলতেও পারতো না। চাপ প্রয়োগ করা হতো- অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমে চক্রটির তৈরি করা মাদকের ক্লোজ গ্রুপে যুক্ত হওয়ার। কেবল তা’ই নয় ওই গ্রুপ থেকে নিয়মিত মাদকের ক্রেতা হতে হবে এবং মাদকের বিত্তশালী ক্রেতা যোগাড় করে দিতে হবে অথবা বন্ধু-বান্ধবীদেরকে মাদকের প্রতি আসক্ত করে তুলতে হবে। যাতে করে নতুন করে মাদকাসক্তরা চক্রটির কাছ থেকে নিয়মিত মাদক ক্রয় করে। এমন করে ধারাবাহিকভাবেই চক্রটি মাদকের ভয়ঙ্কর নেটওয়ার্ক তৈরি করে আসছিল।
খন্দকার আল মঈন বলেন, তাদের মেথ ল্যাবটি মূল কেমিস্ট এইচএসসি পাস রুদ্র ও তার কয়েকজন সহযোগীরা পরিচালনা করতেন। তারা আইস ও ইয়াবার পরীক্ষামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। বাজার থেকে বিভিন্ন ওষুধ ও কেমিক্যাল আইসের সঙ্গে মিশিয়ে পরিমাণ বাড়িয়ে বিক্রি করতেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে ইয়াবার রঙ পরিবর্তন এবং ঝাক্কি তৈরি করতেন। ঝাক্কি তৈরিতে তারা তরল পানীয়র সঙ্গে ইয়াবা, ঘুমের ওষুধ ও অন্যান্য নেশাজাতীয় ওষুধ মেশাতেন। এই ঝাক্কি ইয়াবার চেয়েও শক্তিশালী।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিনিয়ত ইয়াবা সেবনে চরম আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছায়। পরবর্তীতে আসক্তির মাত্রা বাড়াতে বিগত কয়েক বছর ধরে তারা আইস গ্রহণ শুরু করে। তারা বিভিন্ন সময়ে উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের নেশায় উদ্বুদ্ধ করত।
তিনি বলেন, ক্রিস্টাল আইস মাদকটি দামি হওয়ায় সাধারণত বেশিরভাগ ক্রেতাই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
তিনি আরও বলেন, তৌফিককে আমরা চক্রের মূল সমন্বয়ক হিসেবে পেয়েছি। আগে তারা ইয়াবা কারবারে জড়িত ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুই বছর ধরে নতুন মাদক ক্রিস্টাল আইস নিয়ে কাজ শুরু করে। সময়ের প্রয়োজনে এখন ঝাক্কি প্রস্তুত করছিল তারা। চক্রটি টেকনাফ, মিরপুর, গুলশান-বনানীর বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ক্রিস্টাল আইস সংগ্রহ করে সেগুলো তাদের সার্কেলে সরবরাহ করত। এই একটি গ্রুপের বাইরে আরও কয়েকটি ক্লোজ গ্রুপ রয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা কার্যক্রম অব্যাহত হয়েছে।
অস্ত্রের ব্যবহার প্রসঙ্গে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আটক জুবেইনের এইম গেমিংয়ের নেশা ছিল। মাদক সেবনের পর তারা এই অস্ত্র দিয়ে এইম গেমিংয়ের নামে জুয়াও খেলত। এ ছাড়া যারা মাদক গ্রহণের জন্য আসত তাদের ভয়ভীতি পরিদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হতো।