এই চক্রের ফাঁদ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, রাত সাড়ে ৯টায় কুড়াতলী বিআরটিসি বাস কাউন্টারের সামনে ভুলতা গাউছিয়াগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মো. আরিফুল ইসলাম। তখন একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেটকার তার সামনে এসে দাঁড়ায়। কোথায় যাবেন জিজ্ঞেস করে প্রাইভেটকারে উঠতে বলে। তিনি উঠে পড়েন এবং প্রাইভেটকারটি গাউছিয়ার উদ্দেশে রওনা করে। এর প্রায় ২০০ মিটার যাওয়ার পর পেছনের সিটে তার দুই পাশে বসা দুই যাত্রী তার হাত চাপ দিয়ে ধরে। আরিফুলকে গামছা দিয়ে বেঁধে কিল ঘুষি মারতে থাকে এবং গলায় ছুরি চেপে ধরে ভয় দেখায়। তার কাছে থাকা মোবাইল সেট, নগদ অর্থ ও ব্যবহৃত বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন কোড জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়।

তিনি জানান, রাত আনুমানিক সোয়া ১০টার দিকে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গাজীপুরের কালিগঞ্জ থানা এলাকায় চোখে স্প্রে করে নামিয়ে দেয়। আরিফুলের আর ততক্ষণে বুঝতে বাকি থাকে না তিনি ছিনতাইকারী চক্রের খপ্পড়ে পড়েছেন। পরবর্তীতে আরিফুল বাসায় গিয়ে দেখতে পান, ছিনতাইকারীরা তার বিকাশ নাম্বারে থাকা টাকা সেন্ড মানি করে নিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনায় তিনি খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি মামলাটি ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা বিমান বন্দর জোনাল টিম।

এ মামলার ঘটনা তদন্তে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করে গোয়েন্দা টিম। এরপর বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার সিটি ফিলিং স্টেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের বিমান বন্দর জোনাল টিম।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- সংঘবদ্ধ চক্রের প্রধান মো. মানিক মিয়া, মো. জাকির হোসেন, মো. আরিফ, মো. হযরত আলী ও মো. জাহিদ হোসেন। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার (রেজি. নম্বর ঢাকা মেট্টো-গ-১১-৭৪৫৭), একটি মোবাইল ফোন, একটি ছুরি, একটি গামছা, একটি খাকি রংয়ের স্কচটেপ, লাল-কালো রংয়ের ইলেকট্রিক তার ও একটি স্ক্রু-ড্রাইভার উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা ঢাকা মহানগরীর খিলক্ষেত, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে ভুলতা-গাউছিয়া ও এয়ারপোর্ট থেকে ময়মনসিংহ, শেরপুরে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে কৌশলে যাত্রী উঠায়। পরবর্তী সময়ে যাত্রীর গলায় ইলেকট্রিক তার পেঁচিয়ে, গামছা দিয়ে চোখ ও হাত বেঁধে, মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে, গলায় ছুরি ধরে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে যাত্রীর সর্বস্ব লুট করে। এরপর নির্জন স্থানে ফেলে দিয়ে চলে যায়। তাদের খিলক্ষেত থানায় দায়েরকৃত মামলায় রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।