জাতীয় প্রেস ক্লাবে ছাত্রদলের সঙ্গে সংঘর্ষ
পুলিশের মামলায় আসামি ২৫০
প্রীতম সাহা সুদীপ
🕐 ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ০২, ২০২১
জাতীয় প্রেস ক্লাবে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ৪৭ নেতাকর্মী ও অজ্ঞাতনামা ২০০-২৫০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মামলায় পুলিশের ওপর হামলা, হত্যাচেষ্টা ও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এদিকে প্রেস ক্লাব ও আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যারাই হামলা করেছে, গাড়ি ভাঙচুরসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করেছে, তাদের প্রত্যেককেই খুঁজে বের করা হবে। সংঘর্ষের ঘটনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, প্রেস ক্লাবে পুলিশ চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। এছাড়া পুলিশকে কেন প্রতিপক্ষ বানানো হয়- এমন প্রশ্ন রেখে নিজের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।
২৫০ জনকে আসামি করে মামলা, রিমান্ডে ১৩
সোমবার গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদলের ১৩ নেতাকর্মীকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর (এসিএমএম) আসাদুজ্জামান নূর তাদের প্রত্যেকের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে রোববার দিবাগত রাতে পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় পুলিশের ওপর হামলা, হত্যাচেষ্টা ও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগে মামলা করে। মামলায় এজাহার নামীয় বিএনপির ৪৭ নেতাকর্মী ও অজ্ঞাতনামা ২০০-২৫০ জনকে আসামি করা হয়। ১৩ জনকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। তারা হলেন- মঞ্জুরুল আলম, আতাউর রহমান, মাসুদ রানা, শফিকুল ইসলাম, আহসান হাবিব ভূঁইয়া রাজু, কবির হোসেন, মনোয়ার ইসলাম, আরিফুল হক, আনিচুর রহমান, খন্দকার অনিক, আবু হায়াত মো. জুলফিকার, আতিফ মোর্শেদ ও রমজান।
ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করছে পুলিশ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সাজ্জাদুর রহমান দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, অনুমতি ছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবে সমাবেশ ডেকে ছাত্রদলসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়, ইটপাটকেল ছোড়ে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। হামলার ঘটনায় রাতে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় আটকদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যারা হামলা করেছে, গাড়ি ভাঙচুরসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করেছে, তাদের প্রত্যেককেই শনাক্ত করব। গত রোববার বিকাল থেকেই প্রেস ক্লাব ও আশপাশ এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সোমবার দুপুরে প্রেস ক্লাবের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, আমরা দেখলাম প্রেস ক্লাবের সামনে একা একজন পুলিশকে পেয়ে কীভাবে পেটানো শুরু হলো, তা সবাই দেখেছেন। সেখানে পুলিশ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। প্রেস ক্লাবে কোনোদিন আমাদের পুলিশ ভেতরে ঢোকে না এবং এদিন যেভাবে ইটপাটকেল ছুড়ছিল সে সময় দু-একজন হয়তো ঢুকেছে। কিন্তু যেভাবে ইট-পাটকেল ও মারামারির সৃষ্টি হয়েছিল, সেখানে উচিত ছিল মারামারি না করা। চরম ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে পুলিশ।
‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে-২০২১’ উপলক্ষে পুলিশ স্টাফ কলেজের স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা এবং স্বীকৃতি স্মারক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রেস ক্লাব অনিরাপদ হয়নি। আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন, আমিও আধঘণ্টা ধরে দেখেছি, আপনারাই ছবি তুলে প্রচার করেছেন। টিয়ার গ্যাসের বিষয়ে তিনি বলেন, ?ঘটনা যখন অতিমাত্রায় চলে যায় তখন পুলিশ টিয়ার গ্যাস মেরে তাদের সরানোর চেষ্টা করে, এটি একটি কৌশল মাত্র।
পুলিশকে কেন প্রতিপক্ষ বানানো হয় : আইজিপি
অনুষ্ঠানে একই বিষয়ে কথা বলেন পুলিশপ্রধান ড. বেনজীর আহমেদ। প্রেস ক্লাবের ঘটনায় প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, পুলিশকে কেন প্রতিপক্ষ বানানো হয়? এটা বাংলাদেশের সব শান্তিপ্রিয় মানুষের প্রশ্ন। পুলিশ তো কারও প্রতিপক্ষ নয়। রোববার প্রেস ক্লাবের সামনে এক পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। তারপরও পুলিশ সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রেখে কাজ করছে। পুলিশকে পেটানোর ঘটনায় কোনো রিফ্লেকশনও হয়নি। এ বিষয়টি নিয়ে কেউ কথাও বলেনি। যারা এ দেশে বড় হয়ে এদেশের বুকেই ছুরি মারতে চায় তাদের মুখে ছাই দিতে চায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি আরও বলেন, কোনো বিরোধী শক্তির ছোট্ট একটি অংশ রয়েছে, তা বোঝা যায়। সরকারের কোনো অর্জন বা উন্নয়নে তাদের কিছু যায় আসে না।
ওই ছোট একটা গ্রুপ দেশের কোনো ভালো কিছু দেখে না এবং সমালোচনা করে। যারা দেশের ও পুলিশের সমালোচনা করে তাদের সবার মুখে ছাই পড়ুক। তিনি আরও বলেন, দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের শত্রুদের বিরুদ্ধে এবং রাষ্ট্রকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পুলিশ যুদ্ধ করে। এই যুদ্ধ ক্রমাগত, অবিরত ও অবিরাম। যুদ্ধ হলেই অবিরামভাবে আসে মৃত্যু। আর সে কারণেই প্রতি বছর আমরা আমাদের ডজন ডজন সহকর্মী হারাই। পুলিশে এই মৃত্যুর মিছিল, শাহাদতবরণকারীদের মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আমরা আর কোনো মৃত্যু দেখতে চাই না। আমাদের পরিবারও মৃত্যু দেখতে চায় না।