রণক্ষেত্র জাতীয় প্রেস ক্লাব
প্রীতম সাহা সুদীপ
🕐 ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ০১, ২০২১
কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশকে ঘিরে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ-সাংবাদিক ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ অর্ধশতাধিক আহতের খবর পাওয়া গেছে। আটক হয়েছেন সংগঠনটির ১০-১২ জন নেতাকর্মী।
গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিতে প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে প্রেস ক্লাবে আসেন। এর মধ্যেই প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। প্রস্তুত থাকতে দেখা যায় পুলিশের জলকামানের গাড়ি, আর্মার্ড কার ও প্রিজন ভ্যান। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বেলা ১১টার দিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল সেখানে উপস্থিত পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন পুলিশ তাদের জানায় অনুমতি ছাড়া প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় সমাবেশ করা যাবে না। এরপরপরই বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রেস ক্লাবের মূল ফটকের বাইরে এসে ফুটপাতে অবস্থান নেন। তখন পুলিশ তাদের বাধা দেয়, শুরু হয় ধস্তাধস্তি।
একপর্যায়ে পুলিশ নেতাকর্মীদের লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে প্রেস ক্লাবের ভেতরে ঢুকে যায় এবং ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। অনেকে ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে চেয়ার ছুড়ে মারে। আবার কয়েকজনকে বাঁশ নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করতে দেখা যায়। একপর্যায়ে পুলিশের একটি দল প্রেস ক্লাবের ভেতরে ঢুকে লাঠি পেটা করে এবং কয়েক রাউন্ড কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে।
এরপর দ্বিতীয় দফায় আবারও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেন। সে সময় পুলিশ আবারও তাদের লাঠিচার্জ করে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন। এছাড়া সংঘর্ষ চলাকালীন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এটিএন বাংলার সিনিয়র ক্যামেরাপারসন মামুনসহ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন।
পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় প্রেসক্লাবের ৫-৬ জন কর্মচারী আহত হন। ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীও আহত হন। আহতদের মধ্যে অনেককেই চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালটির পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, প্রেস ক্লাবের ঘটনায় ৫-৬ জন পুলিশ সদস্যসহ আহত কমপক্ষে ৩০ জন সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে যান।
এদিকে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রদলের পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচি প- হওয়ায় বেলা সাড়ে ১২টার দিকে প্রেস ক্লাব থেকে বেরিয়ে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংঘর্ষে আহত বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সহসভাপতি মামুন খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এজাজ শাহ, ইডেন কলেজ ছাত্রদল সদস্য সচিব সানজিদা ইয়াসমিন তুলি, ছাত্রদল ঢাকা মহানগর পূর্ব সহ-সভাপতি শাকিল চৌধুরী ও সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসানসহ আরও কয়েকজন।
আটক ১০-১২ জন, ব্যবস্থা নেবে পুলিশ
এদিকে প্রেস ক্লাবের ওই ঘটনায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সাজ্জাদুর রহমান। দৈনিক খোলা কাগজকে তিনি জানান, ছাত্রদলের ১০ থেকে ১২ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে নাম-পরিচয় ও তথ্য যাচাইয়ের কাজ চলছে।
ডিসি সাজ্জাদ আরও বলেন, অনুমতি ছাড়াই তারা প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। আমরা আগে থেকে কোনো সমাবেশের কথা শুনিনি। গত রাতেই হঠাৎ করে তারা এ সমাবেশের ডাক দেয়। সকাল থেকে নেতাকর্মীরা প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকে। এ সড়কটি একটি ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, এখানে সমাবেশ করতে হলে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু তাদের অনুমতি ছিল না। সকালে যখন তারা আমাদের সাথে কথা বলেছে, তখনও আমরা অনুমতি নিতে বলেছি। কিন্তু তারা অনুমতি না নিয়েই সমাবেশের চেষ্টা করে এবং ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এরপর পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে অ্যাকশনে যায়। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশি অ্যাকশন দিয়ে টিকে থাকা যাবে না : মোশাররফ
সংঘর্ষের পরপরই দুপুরে প্রেস ক্লাবের মওলানা আকরম খাঁ হলে এক সভায় এ বিষয়ে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ নির্দয়ভাবে কাঁদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। অমানুসিকভাবে পুলিশ ছাত্রদের লাঠিপেটা করেছে। এতে বহু কর্মী আহত হয়েছেন।
গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিবাদ করা সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সরকার এভাবে এ ধরনের প্রতিবাদকে দাবিয়ে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু এটা কখনোই সফল হবে না। সাময়িকভাবে হয়তো দাবিয়ে রাখা যাবে। কিন্তু জনগণের প্রতিবাদকে, জনগণের ক্রোধকে সারা জীবনের জন্য দাবিয়ে রাখা যায় না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, অতীতেও স্বৈরাচাররা এ চেষ্টা করেছে। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানকে দেখেছি, এছাড়া বাংলাদেশের এরশাদকে দেখেছি। কিছুদিন পর্যন্ত এই স্বৈরাচারেরা গায়ের জোরে এভাবে পুলিশি অ্যাকশন দিয়ে টিকে থাকতে পারে। বেশি দিন টিকতে পারে না। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের প্রতিবাদে এ সভার আয়োজন করে জিয়া পরিষদ।