ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

লকডাউনের পর নতুন সাজে খুলছে চিড়িয়াখানা

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১২:৪৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২০

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় ৮ মাস বন্ধ থাকার পর শর্তসাপেক্ষে খুলছে ঢাকার মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা। ১ নভেম্বর,
রবিবার থেকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে জাতীয় চিড়িয়াখানার  দরজা।

চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের পদচারণায় আবার মুখরিত হবে, ভাঙবে সুনসান নীরবতা।মহামারীর শুরুতে ২০ মার্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল জাতীয় চিড়িয়াখানা। দীর্ঘ বিরতির পর এক নবরূপে সাজানো হয়েছে চিড়িয়াখানা।চলছে শেষ মুহূর্তের সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। 

জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর আবদুল লতিফ জানান, “দীর্ঘদিন পর চিড়িয়াখানা খুললেও করোনা ভাইরাসের কারণে দর্শনার্থীর সংখ্যা ও পরিদর্শনের সময় সীমিত করা হয়েছে।দিনে আট ঘণ্টার জায়গায় এখন ৬ ঘণ্টা খোলা থাকবে। আগে যেখানে প্রতিদিন আট থেকে দশ হাজার মানুষের আনাগোনা থাকত, এখন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবেন বলে জানান আবদুল লতিফ।পরিস্থিতির অবনতি হলে চিড়িয়াখানা আবার বন্ধ করে দিতে পারে কর্তৃপক্ষ।পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিকের ‍দিকে যায় তাহলে হয়ত সময়টা বাড়াব। তবে পরিস্থিতি জটিল হলে আমরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করব।”

সম্প্রতি চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে টিকেট কাউন্টারের সামনে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে আঁকা হয়েছে বৃত্তাকার চিহ্ন, টানানো হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যানার।সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ব্যবহার করা হবে একমুখী পথ, সেজন্য দেওয়া হয়েছে দিক-নির্দেশনাও। চিড়িয়াখানার ভেতরে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে করোনাভাইরাসের সতর্কবার্তা দেখানো হচ্ছে। দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রবেশ করতেই পাবেন হাত ধোয়ার জন্য নতুন করে বসানো বেসিন, যেখানে সাবান ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও থাকবে।

কিউরেটর আবদুল লতিফ সংবাদ মাধ্যমে জানান, দর্শনার্থীরা প্রবেশের সময় ফুটপাথ ব্যবহার করবেন, সেখানে জীবাণুনাশক দেওয়া আছে। প্রবেশের আগে থার্মাল স্ক্যানারে তাদের তাপমাত্রা মাপা হবে। তবে যে শর্তগুলো মেনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে চিড়িয়াখানা খোলার অনুমতি দিয়েছিল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, তাতে প্রবেশ ফটকে জীবাণুনাশক টানেল বসানোর নির্দেশনা থাকলেও তা দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে কিউরেটর বলেন, “এটি নিয়ে আসলে বিতর্ক বয়েছে, সেজন্য আমরা তা বাদ দিয়েছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছে।”
সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে চিড়িয়াখানার মূল ফটকটি নতুন করে করা হয়েছে। মূল ফটক, ভেতরের রাস্তাসহ অন্যান্য স্থাপনায় এখন চলছে শেষ সময়ের সজ্জার কাজ।প্রাণীদের নিরাপত্তা খাঁচায়ও চলছে ঝালাইয়ের কাজ; সংস্কার করা হচ্ছে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় দর্শনার্থীদের চমক দিতেই নতুন আঙ্গিকে চিড়িয়াখানার সবকিছু সাজানোর কথা বললেন কিউরেটর। তিনি বলেন, “আমরা প্রাণিবিজ্ঞান জাদুঘরকে ঢেলে সাজাচ্ছি। অ্যাকুরিয়ামে মাছের ব্যবস্থা করছি। কিছু প্রাণী, বডি আছে- সেগুলোকে নতুন সাজে সজ্জিত করছি। প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন, এখন আমরা অপেক্ষা করছি দর্শনার্থীদের জন্য।”

তিনি আরো জানান, “ সামাজিক দূরত্ব মেনে সরাসরি টিকিট কেটে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতে হবে। এখানে যারা দর্শনার্থী হিসেবে আসেন, তাদের একটি বড় অংশ নিরক্ষর। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে অনলাইনে টিকেটের ব্যবস্থা করা যায়। এটা একটু সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুলও বটে।”
তবে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিরা চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।

যেসব নিয়ম মানতে হবে দর্শনার্থীদের-
> চিড়িয়াখানায় প্রবেশের ক্ষেত্রে দর্শনার্থীদের প্রবেশের সময় অমোচনীয় রঙ দিয়ে চিহ্নিত বৃত্তাকার স্থানে অবস্থান করতে হবে
> প্রবেশ ফটকে ফুটবাথ ব্যবহার করতে হবে
> ভেতর প্রবেশের পর দিক নির্দেশক অনুসরণ করে একমুখী পথ ব্যবহার করতে হবে
> বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে
> খাবার নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না
> ভেতরে ভিড় বা জটলা করা যাবে না

এ ছাড়া দর্শনার্থীরা যাতে প্রাণীদের খাবার দিতে না পারে, সেদিকেও নজরদারি রাখা হবে বলে জানান আবদুল লতিফ। মহামারীতে শতাধিক নতুন অতিথি জন্মেছে। ১৮৬ একরের এই চিড়িয়াখানায় মহামারীর মধ্যে জন্মেছে ১১৬টি শাবক, যেখানে আগে ছিল ২৭০০ বন্যপ্রাণী। নতুন জন্মানো শাবকগুলোর মধ্যে রয়েছে- একটি জিরাফ, দুটি জলহস্তি, ১৮টি চিত্রা হরিণ, একটি মায়া হরিণ, একটি ঘোড়া, দুটি ইম্পালা, দুটি গাধা, একটি কমন ইল্যান্ড, ২৩টি ময়ূর, ১৩টি ইমু, ৩০টি বক, সাতটি ঘুঘু, ১৫টি কবুতর।নতুন-পুরাতন মিলিয়ে চিড়িয়াখানায় এখন ২৮১৫টি প্রাণী রয়েছে।

 

 
Electronic Paper