ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দেয়াল খুঁড়তে গিয়ে মিলল মানব কঙ্কাল

প্রীতম সাহা সুদীপ
🕐 ১:১৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৫, ২০২০

একজন জলজ্যান্ত মানুষকে খুন করে, লাশ গুম করার জন্য ইট-বালু আর সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে দেয়ালের মধ্যে মরদেহ লুকিয়ে ফেলার ঘটনা বিভিন্ন হরর বা থ্রিলার সিনেমায় অহরহ দেখা যায়। তবে সম্প্রতি এমন একটি ঘটনাই ঢাকার মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দাদের বিস্মিত ও আতঙ্কিত করে তুলেছে।

সম্প্রতি মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ৩৮৯ নম্বর বাড়ির দেয়াল খুঁড়ে উদ্ধার করা হয়েছে এক মানব কঙ্কাল। এটি কোনো নারীর কঙ্কাল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাটি গত সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ তারিখের। পাঁচতলা ওই ভবনের নিচতলার ফ্ল্যাটে হঠাৎ পানির সমস্যা দেখা দেয়। ভাড়াটিয়ার অভিযোগ পেয়ে সমস্যার সমাধান করতে একজন মিস্ত্রিকে মেরামতের কাজ দেন বাড়িওয়ালা আবদুল হালিম সরকার।

পানির পাইপলাইনের কোথায় সমস্যা, সেটি চিহ্নিত করতে দেয়ালে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেন মিস্ত্রি। এক পর্যায়ে ফ্ল্যাটের স্টোররুমের ওপরে ফলস ছাদের দেয়াল খুঁড়তে থাকেন তিনি। আর তখনই বেরিয়ে আসে একটি নরকঙ্কাল, সেটি দেখে আঁতকে উঠেন মিস্ত্রি ও ফ্ল্যাটটির বাসিন্দারা। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় মিরপুর থানা পুলিশকে। পুলিশ এসে কঙ্কালটি উদ্ধার করে, তবে সেটি উদ্ধারের ১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও নিহতের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

১৭ সেপ্টেম্বর কঙ্কালটি উদ্ধারের ঘটনায় মিরপুর থানায় একটি মামলা হয়। তবে বিষয়টি গোপন রাখা হয়। গত শনিবার তথ্যটি গণমাধ্যমের সামনে আসে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, কেউ হত্যার পর লাশটি গুম করার উদ্দেশ্যে খুবই সুকৌশলে ইট-সিমেন্ট-বালুর প্রলেপ দিয়ে দেয়ালের মধ্যে ঢেকে রেখেছিল। দুর্গন্ধ যাতে না ছড়ায় সেজন্য খুনি পলিথিনে লাশটি মোড়ানোর পাশাপাশি তাতে চাপাতাও মিশিয়ে দিয়েছিল।

কঙ্কালটি পরীক্ষার পর ফরেনসিক বিভাগ জানিয়েছে এটি একটি নারীর কঙ্কাল। কারণ, কঙ্কালের পাশে ৫-৬ ইঞ্চি লম্বা চুল পাওয়া গেছে। তবে কবে এই হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে সেটি এখনও জানতে পারেনি পুলিশ। ডিএনএ প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরই হত্যাকান্ডের সময়কাল সম্পর্কে জানা যাবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

মিরপুর থানার ওসি মোস্তাজিরুল রহমান দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, কঙ্কালটির পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি ঘটনার পেছনে জড়িত অপরাধীকেও খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম বলেন, বাড়িটির মালিক এবং বর্তমান ও সাবেক সব ভাড়াটিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া আশপাশের এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের ব্যাপারেও আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে ঘটনার সম্ভাব্য তারিখ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারব। নিহতের পরিচয় ও প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করতে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে মামলাটির তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

বাড়ির মালিক আবদুল হালিম সরকার জানান, তিনি ১৯৯০ সালে বাড়িটি নির্মাণ করেন। ৯৩ সাল পর্যন্ত তিনিই নিচতলায় বসবাস করেছেন। এরপর গত ২৭ বছরে নিচতলায় কমপক্ষে তিনটি পরিবার ভাড়াটিয়া হিসেবে ছিল। তাদের সবার তথ্যই তিনি পুলিশকে দিয়েছেন।

আবদুল হালিম আরও জানান, আদম আলী নামে এক ব্যক্তি প্রায় ২০ বছর নিচতলার এই ফ্ল্যাটে থেকে গেছেন। এরপর নোমান নামে আরেক ভাড়াটিয়া ছিলেন তিন মাসের মতো। আর বর্তমান বাসিন্দা শ্যামল ৯ মাস ধরে আছেন।

তিনি বলেন, কীভাবে আমার বাড়িতে কঙ্কাল এলো, কে এই ঘটনা ঘটাল কিছুই তো বুঝতে পারছি না। আমরা তো কখনো লাশ পচা গন্ধও পাইনি। আমার কাছে যা তথ্য ছিল সব কিছুই পুলিশকে জানিয়েছি। আমরা চাই এর সুষ্ঠু তদন্ত হোক, আসল অপরাধী ধরা পড়ুক।

নিচতলার বর্তমান বাসিন্দা শ্যামল খান বলেন, আমি ৯ মাস ধরে এই ফ্ল্যাটে থাকি কিন্ত কখনও কোনো লাশ পচা দুর্গন্ধ নাকে পাইনি। আর কল্পনাও করতে পারিনি যে, পরিবার নিয়ে এই কঙ্কালের সঙ্গে বাস করছি। সেদিন পানির সমস্যা ঠিক করতে এসে মিস্ত্রি দেয়াল না ভাঙলে তো এই ঘটনা জানতেও পারতাম না। এখন সারাক্ষণই ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে আমাদের।

 
Electronic Paper