ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফুটপাতে হকারদের পাশে নেই কেউ

তুষার রায়
🕐 ৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২০

করোনা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন দেশের শ্রমজীবী মানুষ। তাদের মধ্যে অন্যতম হকার শ্রেণি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের ফুটপাতে কয়েক লাখ হকার ব্যবসা করেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে তাদের ব্যবসা বন্ধের উপক্রম। ফুটপাতের দোকানগুলো চালু হলেও সামান্যই বিক্রি হচ্ছে। ফলে সংসার চলছে না তাদের। অনেকে ব্যয় নির্বাহ করতে না পেরে গ্রামে ফিরে গেছেন। আবার কেউ কেউ ফুটপাতের ব্যবসা তুলে দিয়ে অন্য কাজে ঢুকছেন। তারা বলছেন, করোনাকালে সরকার প্রণোদনা দিলেও তার সুফল হকাররা পাননি। আবার সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ বা সহায়তাও তারা পান না। দুর্দিনে দেখা মেলেনি তাদের নেতাদের। তারা বলছেন, একটু আর্থিক সহযোগিতা পেলে আবার ঘুরে দাঁড়ানো যেত। তবে তারা আশা করছেন, আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। বিক্রিও বাড়বে।

বেসরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সারা দেশে হকারের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। তাদের মধ্যে ঢাকাতেই রয়েছে চার লাখ। এর বাইরে বিপুলসংখ্যক হকার রয়েছে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে।

রাজধানীর গুলিস্তান, শাহবাগ, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় হাজার হাজার মানুষ চলাচল করছে। ফুটপাতগুলোতে আবার পণ্য সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। তবে কেনাবেচা হচ্ছে খুবই কম। বিক্রেতারা জানান, মানুষের হাতে আগের মতো টাকা নেই। তারা নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কেনাকাটা করছেন না। এজন্য আগের বেশি দামে কেনা মাল কম দামে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। তাতে মাস শেষে যা থাকছে তাতে সংসার চালানোই দায়। তারা জানান, এরমধ্যে রয়েছে ফুটপাতে বসার চাঁদা। বেচাকেনা হোক না হোক নিয়মিত চাঁদা দিতে হচ্ছে। এসব কারণে শহর ছেড়ে গেছে হকারদের একটি বড় অংশ। আর যারা শহরে আছে তাদের অবস্থা আরও শোচনীয়।

হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে তারা সারা বছরই উচ্ছেদ আতঙ্কে থাকেন। এখন করোনা মহামারীর মধ্যে ব্যবসা তো দূরে থাক, পরিবারের পেট চালিয়ে নেওয়াই বড় দায় হয়ে পড়েছে।

গুলিস্তানের পোশাক বিক্রেতা হায়দার আলী জানান, জুরাইনে অসুস্থ বাবা, তিন সন্তান ও স্ত্রীসহ ভাড়া বাসায় বসবাস করি। কিন্তু আয় নেই। বর্তমানে অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। সংসার আর চলছে না।

পল্টন মোড়ের জুতা বিক্রেতা আজগর আলী বলেন, ‘জীবনের সবচেয়ে বেশি দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে এখন। সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। আমরা সরকারি-বেসরকারি, কাউন্সিলর বা মেয়র কারও কাছ থেকে সামান্য সাহায্য পাইনি।’


বাইতুল মোকাররম মসজিদ সংলগ্ন ফুটপাতে কসমেটিকস সামগ্রীর বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, করোনা আমাদের পথে দিয়েছে। আমরা দিন আনি, দিন খাই। দোকান বন্ধ থাকায় দিন দিন অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমরা কারও কাছ থেকে কোনো সহযোগিতাও পাচ্ছি না। ধার কর্জ করে চলছি।

এছাড়া সংবাদপত্র ফেরি করে বিক্রি করে অসংখ্য হকার। দেশের সব জায়গায় সংবাদপত্রের হকার রয়েছে। তাদের জীবনেও নেমে এসেছে সংকট। তারাও অতিকষ্টে ঢাকা শহরে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছেন।

সংকটে পড়েছেন নীলক্ষেতের বই ব্যবসায়ীরাও। তারা বলছেন, গত পাঁচ মাস স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় বইয়ের ব্যবসাও বন্ধ। ব্যবসা না থাকায় চরম অর্থসংকটে রয়েছে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ মানুষ। স্কুল ও কলেজ আরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকলে এই দুরবস্থা ক্রমেই বাড়তে থাকবে। কিন্তু ব্যবসা বন্ধ থাকলেও দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারী খরচ, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন খরচ তো মাফ হবে না।

এ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। আবার অনেকে অন্য কাজে ঢুকছেন। শুধু অল্প আয়ের ব্যবসায়ীরা নন, ভালো নেই বড় ব্যবসায়ীরাও। তারাও পুরনো ব্যবসার পাশাপাশি নতুন কিছু করার চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, ‘হকারদের রোজগার কমে গেছে। এই মহাদুর্যোগে হকাররা চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। রাষ্ট্র এরই মধ্যে গার্মেন্টসহ বিভিন্ন সেক্টরের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। আমরা সরকারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দাতাগোষ্ঠীর কাছে আরজি জানাই-হকারদের পাশে দাঁড়ান, তাদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করুন।’

 
Electronic Paper