ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফিরে দেখা ২০১৯

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ব্যর্থ উদ্যোগ

তোফাজ্জল হোসেন
🕐 ৮:৫৩ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯

নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে বিদায় নিচ্ছে ২০১৯। নাগরিকদের ছোট বড় নানা সমস্যা নিয়ে বছর জুড়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ঝুলিতে ভালো কাজ যেমন ছিল, তেমনি ছিল সমালোচনা। নগর ভবন থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ের সবখানে এডিস মশার আতঙ্ক মানুষের ভীত নাড়া দিয়েছিল। মশা নিধনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও সেভাবে দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়নি।

জানা গেছে, পথচারীদের বিড়ম্বনা তবুও ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকারদের জীবিকার বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়ায় বারবার অভিযানের পরও ফের দখল হয়ে যাচ্ছে ফুটপাত। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বারবার দখল হচ্ছে ফুটপাত। অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহযোগিতা না করায় দখলমুক্ত করার পর আবারও তা অবৈধ দখলে চলে যাচ্ছে। সংস্থার নিজস্ব বাহিনী না থাকা ও এর পেছনে আরেকটি কারণ।

মশার ওষুধ ভেজালে ডেঙ্গুর ছড়াছড়ি : ডিএসসিসির সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল এডিস মশার ওষুধ অকার্যকর হওয়ার বিষয়টি। নতুন ওষুধ কেনাকাটায় ছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-এর গবেষণায় ওষুধ অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে মশক নিধন কার্যক্রমে ওষুধ ছিটিয়ে কমানো যায়নি।

‘গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা’ স্লোগানে সীমাবদ্ধ
২০১৬ সালে ডিএসসিসির ‘গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা’ স্লোগান থাকলেও বছরের শেষের দিকে তা স্লোগানেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বছর শেষে দেখা যায় ঘোষিত কর্মসূচির খুব কমই বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২০১৬ সালকে ‘পরিচ্ছন্ন বছর’ হিসেবে ঘোষণা করেন ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। বিভিন্ন সময় প্রচারণামূলক র‌্যালি, বিলবোর্ডে ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন অপসারণসহ পরিচ্ছন্ন অভিযান করে সংস্থটি। কিন্তু এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে মেয়রকে। পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার লক্ষে এপ্রিলে ঢাকঢোল পিটিয়ে দক্ষিণের বিভিন্ন স্থানে ওয়েস্টবিন বসানো হয়। একই সময় উত্তরও এ প্রকল্প শুরু করে। প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণে প্রায় ৫৭০০ ওয়েস্টবিন বসানো হয়। সব মিলিয়ে এ প্রকল্পে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয় করে ডিএসসিসি। কিন্তু বছর শেষে সবগুলো উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে পড়ে।

সৌর আলো প্রকল্প ব্যর্থ
বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে রাজধানীর সড়কগুলোর অন্ধকার দূর করতে সৌর বাতি স্থাপন করেছিল ডিএসসিসি। তবে সৌর আলোর এ প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ায় এলইডি লাইটে ফেরে সিটি করপোরেশন। দিনের আলো থেকে তাপ নিয়ে রাতে সড়কের অন্ধকার দূর করার কথা ছিল সৌর বাতির। কিন্তু প্রকল্প শুরুর কিছু দিন যেতে না যেতেই তা অন্ধকারে ডুবছে। সোয়া দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটি অপসারণ করে সেখানে বসানো হয় সোডিয়াম বাতির বিদ্যুৎ পোল।

হকার উচ্ছেদ অভিযানে টানাপড়েন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের চলতি বছরে গুলিস্তান, নিউমার্কেট, হাতিরপুল, নীলক্ষেতসহ অধিকাংশ এলাকায় হকার উচ্ছেদ অভিযান কয়েক ধাপে চালানো হলেও শেষমেশ উচ্ছেদ করতে পারেনি। আগের মতোই ফুটপাত দখল করে হকাররা পথচারীদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। অথচ ফুটপাত দখলমুক্ত, অবৈধ যানবাহন এবং পার্কিং বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেও সফলতা মুখ দেখতে পারেনি ডিএসসিসি।

রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ দেওয়ার অভিযোগ
ডিএসসিসির অঞ্চল-২ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য দুটি জন্মসনদ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। স্থায়ী ঠিকানা কক্সবাজার এবং বর্তমান ঠিকানা ঢাকা দেখিয়ে ডিএসসিসি থেকে জন্মসনদ তোলেন দুই রোহিঙ্গা। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার জেনারেল (যুগ্ম-সচিব) মো. মাহবুব-উল আলম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বরাবর পাঠানো হয়।

বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা কাগজে-কলমে
রাজধানীবাসীর মলমূত্র, রান্না ও দৈনন্দিন উৎপাদিত বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেয় ডিএসসিসি। এতে করপোরেশনের বিদ্যুৎ খরচ পূরণসহ নগরীর বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণ হবে। এই পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ৮১ একর জমি অধিগ্রহণেরও কাজ চূড়ান্ত থাকলেও বাস্তবায়ন শুধু কাগজে-কলমে বছর শেষ।

যানজট নিরসন
রাজধানীতে যানজট সমস্যা দিন দিন ব্যাপক আকার ধারণ করছে। এ শহরে এখন ঘণ্টায় গড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার গতিতে চলে যানবাহন। তবে এ অবস্থা নিরসনে ডিএসসিসি কাজ করলেও কোনো সফলতা আসেনি। বরং আগের চেয়ে গাড়ির গতি যেমন কমেছে তেমনি যানজট বেড়েছে।

 
Electronic Paper