রামপাল, মাতারবাড়ি ও ইক্ষু ফার্ম নিয়ে গণশুনানীর রায়
ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের আগে উচ্ছেদ নয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৭:১৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০১, ২০১৯
উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতামত গ্রহণ, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না করে ভূমি অধিগ্রহণের চর্চা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। শনিবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ‘উন্নয়ন, উচ্ছেদ, মানবাধিকার ও পরিবেশ বিপর্যয়’ শীর্ষক গণশুনানীর রায়ে এ আহ্বান জানানো হয়। ‘প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চ’ এর আয়োজন করে।
শুনানীর প্রথমে মহেশখালীর মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থানে উচ্ছেদ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও পরিবেশ বিনষ্টের অভিযোগের শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিচারক প্যানেলে ছিলেন মানবাধিকার কর্মী অ্যাড. সুলতানা কামাল ও খুশী কবির। ভুক্তভোগীদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিচারকদের সহযোগিতা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফখারুজ্জামান ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আইনুন নাহার। শুনানীতে সাক্ষী হিসেবে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার স্থানীয় ভুক্তভোগী সকুন্তাজ আতিক, শাহাবুদ্দিনসহ কয়েকজন তাদের অভিজ্ঞতা ও দাবি তুলে ধরেন। তারা অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি ও হয়রানী, চাকুরির ক্ষেত্রে বঞ্চনা, বিকল্প কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা ও উদ্যোগের অভাব, প্রকল্পের কারণে স্থায়ী জলাবদ্ধতা, সামাজিক অসঙ্গতি ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন।
রায়ে সুলতানা কামাল বলেন, ‘স্থানীয় জনগণের মতামত যথাযথভাবে গ্রহণ না করেই প্রকল্প নির্ধারণ এবং বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যেটি মোটেই সমীচিন হয়নি। ’
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ ইক্ষু ফার্ম এলাকার ভুক্তভোগী আদিবাসী সাঁওতাল ও অন্যান্যদের অভিযোগ বিষয়ে শুনানী শেষে সুলতানা কামাল বলেন, বিনা নোটিশে গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে যে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে সেটির জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর যেসব সদস্যরা এ সময়ে ভুক্তভোগীদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেছেন, তাদের বিচার যথাযথ প্রক্রিয়ায় হতে হবে। তিনি উচ্ছেদ হওয়া পরিবারসমূহের যথাযথ পুণর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগের শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিচারক প্যানেলের প্রধান ছিলেন ছিলেন খুশী কবির। বিশেষজ্ঞ প্যানেলে ছিলেন বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পরিবেশ কর্মী শরীফ জামিল এবং অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা।
শুনানী শেষে বিচারক প্যানেলের প্রধান খুশী কবির বলেন, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও তার জন্য কয়লা পরিবহনের ফলে সুন্দরবন ঝুঁকির মুখে পড়বে এ ধরণের বিশেষজ্ঞ মতামত, নাগরিক আন্দোলনকে তোয়াক্কা না করে সরকার এ প্রকল্প গ্রহণ করে। রামপাল প্রকল্প ও তার পার্শ্ববর্তী স্থানগুলোতে ব্যাপক হারে কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। সরকার স্থানীয়দের মতামত ও বিশেষজ্ঞদের মতামত সর্বোপরি জনমতকে শ্রদ্ধা করে পরিবেশ ও জনস্বার্থের বিরোধী প্রকল্প থেকে সরে আসবে এটিই আহ্বান।
সমাপনী বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, সরকার বলেছিল রামপাল, মাতারবাড়ি প্রকল্প চালু হলে বিদ্যুতের দাম কমবে। কিন্তু আমরা সরকারি কাগজপত্রেই দেখছি আসলে বিদ্যুতের দাম বাড়বে। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিলাম সেটি অগ্রাহ্য করে সরকার রামপাল, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুতের মতো পরিবেশ ধ্বংশকারী প্রকল্প অব্যাহত রেখেছে।