ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মিরপুরের ‘ডন’ কলকাতায়

শাহাদাতের নির্দেশেই চাঁদাবাজি-খুন

এম কবীর
🕐 ১০:৪৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০১৯

ঢাকাবাসীর মূর্তিমান আতঙ্ক ও আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের তালিকাভুক্ত শাহাদাত হোসেন বর্তমানে ভারতের কলকাতায় রয়েছেন। এক সময় মিরপুরের ডন হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। চাঁদাবাজি-খুন ও অসংখ্য মামলার আসামি হয়ে ২০০২ সালে দেশান্তরী হয়েছিলেন এই কুখ্যাত সন্ত্রাসী। এখন ভারতের কলকাতায় বসেই বাংলাদেশে ১০টি গ্যাং গ্রুপ তৈরি করে সন্ত্রাসীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। এই গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীরা শাহাদাতের কথামতোই ঢাকার অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করছে এমন তথ্যই রয়েছে র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যার মতো অপরাধ হরহামেশাই ঘটাচ্ছে তারা।

পুলিশের মোস্ট ওয়ানটেড তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী শাহাদাতের কাছে একাধিক দেশের পাসপোর্ট থাকায় দুবাই, সিঙ্গাপুরেও রয়েছে তার যাতায়াত। গত শুক্রবার শাহাদাত বাহিনীর অন্যতম সমন্বয়ক আবু হানিফ ওরফে ডিশ বাদল র‌্যাবের কাছে গ্রেফতার হওয়ার পর আবারো আলোচনায় আসে শাহাদাতের নাম।

র‌্যাব-৪ এর সহকারী পুলিশ সুপার সাজেদুল ইসলাম জানিয়েছেন, কলকাতায় অবস্থানরত সন্ত্রাসী শাহাদাতের নির্দেশে গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগাযোগের নাম্বার সরবরাহ করে তার কাছে পাঠায়। এরপর সেখান থেকেই ভিওআইপি কলে তাদের কাছে বড় অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। যারা চাঁদা দিতে অস্বীকার করে তাদের নানানভাবে ভয়ভীতি এমনকি হত্যার হুমকি দেয় তারা। চাঁদা আদায় হলে গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা হুণ্ডির মাধ্যমে শাহাদাতের কাছে টাকা পাঠায়। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই শাহাদাত গ্রুপের প্রধান সমন্বয়ককে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করার পর তাদের নেপথ্যের কাহিনী স্পষ্ট হয়ে আসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত পালিয়ে থাকলেও থেমে নেই তার অপরাধ কার্যক্রম। শাহাদাত গ্যাং বাহিনীর ভয়ে আতঙ্ক মিরপুর-পল্লবী-ক্যান্টনমেন্ট এলাকার অসংখ্য মানুষ। এই বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে শাহাদাত বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।

গাউছুল আজম পাগল মাওলা খানকা শরীফ দরবারের খাদেম আবদুল হালিম ওরফে পাগল সাগর চান গত ২৬ জুলাই দারুস সালাম থানায় শাহাদাত বাহিনীর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একটি জিডি করার পর বিষয়টি আরও পষ্ট হয়। জিডিতে তিনি অভিযোগ করেন শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাতের সহযোগীরা তার কাছে এসে ঈদ উপলক্ষে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছিল। এরই মধ্যে তিনি কিছু টাকা দিয়েছিলেন কিন্তু সেই টাকা তাদের মনোতুষ্ট না হওয়ায় বেশি টাকা দাবি করে হত্যার হুমকি দিয়েছিল।

অন্যদিকে, ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের নিউ শাহজালাল আবাসিক হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম জুনায়েতকে চাঁদা না দেওয়ায় হত্যা করেছিল শাহাদাতের সেকেন্ড ইন কমান্ড সবুজ। চলতি বছরের জুলাইয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্র্র্তৃক গ্রেফতারের পর সেই ব্যবসায়ীকে হত্যার কথা স্বীকার করে সবুজ। কোটি টাকা চাঁদা না দেওয়ায় শাহাদাতের নির্দেশে হত্যা করা হয়েছিল রফিকুলকে।

সন্ত্রাসী শাহাদাতের কাছের বন্ধু ভাসমান সন্ত্রাসী কলাবাগানের খোরশেদ। বিভিন্ন অপরাধে শাহাদাত ও খোরশেদ যৌথভাবে নেতৃত্ব দিয়ে গঠন করেছিল খোরশেদ-শাহাদাত বাহিনী। ১৯৯৮ সালে আরেক সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর গ্রুপের সদস্য টিপুকে খুন করে অপরাধ জগতে পা রেখেছিল শাহাদাত। ২০০২ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ১০ মে কমিশনার সাইদুর রহমান নিউটন হত্যাকা-ের পর দেশ ছাড়েন শাহাদাত। এরপর থেকে পাড়ি জমান দেশের বাইরে। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য খুন, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী মামলা রয়েছে বিভিন্ন থানায়।

 
Electronic Paper