হঠাৎ দৌরাত্ম্য বেড়েছে ছিনতাইকারীদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০১৯
রাজধানী ঢাকায় হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যা হলেই অস্ত্র ঠেকিয়ে কিংবা ছোঁ মেরে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে তারা। বেপরোয়া ছিনতাইকারীদের হাতে অসহায় নাগরিকরা।
গত শনিবার রাতে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন গ্রীন ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ওলিউর রহমান। রাতে রিকশা করে বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীরা তার ব্যাগটি কেড়ে নেয়। এর মধ্যে ছিল হার্ডডিস্ক, রেকর্ডার ও কয়েকটি পেনড্রাইভ। যেগুলোতে তার গবেষণার নথি ও তথ্য ছিল। এ ছাড়া আইডি কার্ড, ব্যাংকের কার্ড ও নগদটাকাও ছিল। এ ঘটনায় তিনি সংশ্লিষ্ট থানায় একটি অভিযোগও দাখিল করেন। কিন্তু মহামূল্যবান জিনিসপত্র আদৌ পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ী তিনি।
এ বিষয়ে ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘গতরাত সাড়ে ১০টার দিকে রিকশাযোগে ফেরার পথে নিত্যদিনের নির্বাক-সঙ্গী আমার অফিস ব্যাগটি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনের মূলসড়কে সিনেম্যাটিক স্টাইলে মটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারীগণ পলকের মধ্যে লুফে নিয়ে যায়; ব্যাগে হার্ডডিস্ক, রেকর্ডার, ও কয়েকটি পেনড্রাইভ ভরপুর গবেষণার তথ্যাদি ছাড়াও বেশকিছু আইডি, ব্যাংকের কার্ড ও নগদটাকাসহ অনেক অনেককিছু হারিয়ে প্রায় আমার আজ ট্রমাটাইজ অবস্থা!
ঘন্টাদেরেক পুলিশি তৎপরতা শেষে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ধারা ৩৭৯ পেনাল কোডে মামলা হয়েছে। আমার অপ্রকাশিত পিএইচডি গবেষণার তথ্যাদিসহ তথ্যকমিশনের সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্যভাণ্ডার কোনোদিন আর ফিরে না পেলে এ জীবন মনে হয় অপূর্ণই থেকে যাবে আমার। কারণ, ব্যাকআপসহ সদ্য আহরিত প্রাইমারি ডেটার একমাত্র তথ্যভাণ্ডার ছিলো এই ব্যাগে। চিরচেনা এই শহর দিনে দিনে অনিরাপদ ও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে যেন!
গত এক বছরে দু’বার ছিনতাইয়ের শিকার হলাম। গতবার দেহ ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিলো, এবার হয়নি;...শুকরিয়া! আমার এই শহর কবে হবে নিরাপদ? কবে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের গ্যারান্টি মিলবে এই শহরে? বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের রিপিটেশন হয় কি!.. তাই আজ বড় গুটিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে আমার! ইচ্ছে করছে পালিয়ে যাই এই শহর ছেড়ে দূরের কোনো গ্রামে! কোথায় সেই নিরাপদ গ্রাম আমার বাংলা-মায়ের আঁচলকোনে?’
একইভাবে গত ১৩ জুলাই রাতে এনটিভির এক রিপোর্টার তেজগাঁও থানার কাছাকাছি ছিনতাইকারীর হাতে পড়ে মোবাইল খুইয়েছেন। তার মতো আরো বেশ কয়েকজন ছিনতাইয়ের শিকার হয়েও প্রতিকার চেয়ে কোথাও অভিযোগও করছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, ঢাকা মহানগরের ফার্মগেট, শ্যামলী, মলিবাগ ও উত্তরার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম বেড়েছে। এ ছাড়াও নগরের রেল ও বাস টার্মিনালগুলোতে সন্ধ্যায় ও ভোর বেলায় ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দূরপাল্লার যাত্রীরা।
নগরজুড়ে কঠোর নিরাপত্তার পরও হঠাৎ করে কেন ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে এই বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া এ- পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ঢাকা মহানগরীতে ছিনতাইয়ের মতো কিছু ঘটনা ঘটছে। তবে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের টহল ও নজরদারি বৃদ্ধির কারণে আগের চেয়ে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা অনেক কমে গেছে। এরপরও তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যেসব এলাকায় এই ধরনের ঘটনা ঘটছে অভিযোগ আমলে নিয়ে সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।