ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নয়া উদ্যোগ নয়া ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:২১ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৮, ২০১৯

কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই রাজধানী ঢাকার তিন রুটে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রিকশা চলাচল। সিটি করপোরেশন থেকে বলা হয়েছে, যানজট নিরসনে তারা এ উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু করপোরেশনের নতুন এ উদ্যোগে নতুন করে বাসিন্দাদের ভোগান্তি বেড়েছে। যে রুটগুলোতে রিকশা বন্ধ করা হয়েছে সে সব রুটে পর্যাপ্ত গণপরিবহন নিশ্চিত করা হয়নি। হঠাৎ করে রিকশা বন্ধ করে দেওয়ায় চাকরিজীবী, কোমলমতি শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ, পঙ্গু ও প্রতিবন্ধীরা পড়েছে মহাবিপাকে।

গত ৩ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল অথরিটির (ডিটিসিএ) এক বৈঠকে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে সায়েদাবাদ, গাবতলী থেকে আজিমপুর, সায়েন্সল্যাব থেকে শাহবাগ রুটে রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত রোববার (৭ জুলাই) থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট রুটের সিটি করপোরেশ মাইকিং করে জানিয়ে দেয় রিকশা চলাচল বন্ধের বিজ্ঞপ্তি। সিটি করপোরেশনের এ সিদ্ধান্ত জানার পর থেকেই নাগরিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

ক্ষুব্ধ রিকশাচালক ও মালিকরা সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভও করেছে। সকাল থেকে রাজধানীর সায়েদাবাদ জনপদ মোড় থেকে মুগদা, মানিকনগর এবং খিলগাঁও এলাকায় সড়কে অবস্থান নিয়ে তারা অবিলম্বে সিটি করপোরেশনের রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

তারা বলেছে, এসব সড়কে রিক্সা চলাচল বন্ধ করলে অনেক রিকশাশ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। বিকল্প কর্মস্থানের ব্যবস্থা না করে এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। খিলগাঁও রেলগেইট থেকে মিছিল বের করে বাসাবো বৌদ্ধমন্দির ও কমলাপুর টিটিপাড়ায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপে অবস্থান প্রত্যাহার করে তারা।

এদিকে হঠাৎ করে রিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে তিন রুটের ব্যবহারকারী সাধারণ নাগরিক। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দুই শিশুসন্তান নিয়ে বনশ্রী থেকে রিকশাযোগে মালিবাগ সাউথ পয়েন্ট স্কুলে যাচ্ছিলেন গৃহবধূ সামিনা। রামপুরা টিভি সেন্টার পার হতেই তাকে আটকে দেয় ট্রাফিক পুলিশ। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে রিকশা ছেড়ে দিয়ে বাসস্টপেজে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন তারা। কিন্তু রাস্তায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাননি তিনি। অবশেষে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দু’সন্তান নিয়ে হেঁটেই রওনা দেন স্কুলের দিকে।

রাজন তালুকদার নামের বাড্ডার এক বাসিন্দা জানান, বাড্ডা থেকে গুলিস্তানের বাস রয়েছে মাত্র দুটি, একটি আকাশ অপরটি ভিক্টর। পর্যাপ্ত বাস নেই রুটে। ফলে প্রায় সময় তিনি রিকশায় যাতায়াত করেন। হঠাৎ রিকশা বন্ধ করে দেওয়ায় তিন এবং তার মতো অনেকে বিপাকে পড়ে গেছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থেকেও বাস মিলছে না। কারণ রিকশা বন্ধ করে দেওয়া এখন যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে গেছে অনেক। অথচ বাস বাড়ানো হয়নি। সিটিং সার্ভিসের নামে অধিকাংশ বাসই ‘ক্লোজডোর’ থাকে। এতে তাদের ভোগান্তি বেড়েছে।

আনোয়ার হোসেন নামের আরেকজন জানান, মগবাজার থেকে বাড্ডা রুটে ‘স্বাধীন’ নামের একটি বাস সার্ভিস আছে। কিন্তু সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ রুটে রিকশাই ভরসা। কিন্তু এখন রিকশা বন্ধ করে দেওয়ায় এ রুটের মানুষের চলাচলের কোনো উপায় থাকলো না। মগবাজার থেকে মৌচার হেঁটে এসেও পাওয়া যাচ্ছে না পরিবহন। তাকে মালিবাগ পর্যন্ত হেঁটে যেতে হচ্ছে।

বিকল্প ব্যবস্থা না করে রিকশা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধানেমশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। এছাড়া লাখ লাখ রিকশাচালকের কর্মহীন হয়ে পড়ার মতো বিষয় তো আছেই। নগরবাসী বলছেন, গণপরিবহনের সংখ্যা ও সেবার মান না বাড়িয়ে রিকশা চলাচল বন্ধ করার কারণে নারী ও শিশুরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিকশা বন্ধের ক্ষেত্রে যানজটের কথা বলা হলেও নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, রিকশা তুলে দেওয়াই যানজট নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় নয়। এ সিদ্ধান্তে নগরবাসীর ভোগান্তি এবং খরচ বাড়বে বলেও মনে করছেন তারা। এরই মধ্যে বিভিন্নভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নগরবাসী। ক্ষোভ প্রকাশ চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

তারা বলছেন, বাস তো স্বল্প দূরত্বে যাত্রী নেয় না। মেরুল বাড্ডা থেকে শাহজাদপুর পর্যন্ত এলাকায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বাসা থেকে চলাচলের জন্য রিকশাই ব্যবহার করেন।

সায়েদাবাদের জনপথ মোড় থেকে খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা হয়ে কুড়িল পর্যন্ত সড়কটি রাজধানীর উত্তর-দক্ষিণে সংযোগকারী দুটি সড়কের একটি। এ সড়কে রাইদা, জাবালে নূর, গ্রিন ঢাকা, ভিক্টর, তুরাগ, অনাবিল, আকাশ, ছালছাবিল, প্রচেষ্টা, অছিম ও বিআরটিসির দোতলা বাসও চলাচল করে। ফলে রিকশার বিকল্প হিসেবে বাসের কথা বলতে পারেন ঢাকা পরিবহণ সমন্বয় কর্তৃপক্ষসহ (ডিটিসিএ) ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

কিন্তু ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা, বিআরটিসি ও তুরাগ ছাড়া বাকি বাসগুলো স্বল্প দূরত্বের যাত্রী নেয় না। বাড্ডা লিংক রোডের বাসিন্দা আশরাফুল বলেন, আমি এ রাস্তা দিয়ে কাছাকাছি দূরত্বের অনেক জায়গায় যাই। যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরায় প্রায়ই যেতে হয় বিভিন্ন কাজে। এ সড়কে চলাচলকারী বেশির ভাগ বাস কাছাকাছি দূরত্বের যাত্রী নেয় না, দরজা বন্ধ করে রাখে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাসে ওঠাও মুশকিল।

সাফিয়া আহমেদ নামের রামপুরার এক নারী বলেন, বাসে অনেক ভিড় থাকে। অনেক সময় বাস নিতে চায় না। রিকশা ছাড়া চলব কীভাবে?

মাহফুজা নামের আরেক নারী বলেন, রিকশার জন্য আলাদা লেন করে দিয়ে সমস্যা মেটানো যেত। বাচ্চাদের নিয়ে চলাচল করা না হলে অনেক সমস্যা হবে। পুলিশ যদি লেনের রিকশা কন্ট্রোল করতে পারে তাহলে যানজট কম হবে।

নিউ মার্কেটে কেনাকাটা করতে ওই এলাকার যারা রিকশায় যান, তাদেরও পড়তে হচ্ছে সমস্যায়। মামুন নামের লালবাগের একজন বাসিন্দা বললেন, কেনাকাটা বা কোনো দরকারে সাধারণত রিকশায় করেই আসা হয় নিউমার্কেটে। কিন্তু যদি এ রুটে রিকশা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে বিকল্প হিসেবে ভারী যানবাহন ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু সেটাও তো তেমন নেই। তবে পুরোপুরি বন্ধ না করে রিকশার জন্য আলাদা লেন তৈরি করে দেওয়ার পরামর্শ দেন অনেকেই।

 
Electronic Paper