ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সায়মা আমার বোন

ময়নাতদন্তে ধর্ষণ প্রমাণিত

তুষার রায়
🕐 ১০:৫৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৬, ২০১৯

রাজধানীর ওয়ারী বনগ্রামে বহুতল ভবনের ছয়তলায় ছিমছাম ফ্লাটে দিনভর সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকতেন শিশু সামিয়া আফরিন সায়মার মা। বাবা আবদুস সালাম নবাবপুরের ব্যস্ত ব্যবসায়ী। সঙ্গীহীন সাত বছরের শিশু সায়মা প্রতিদিন বিকালে আটতলার নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটে কখনো পুতুলের বিয়ে দিত, কখনো রান্নারান্না খেলত। সায়মার নির্ঝঞ্ঝাট সংসারে একমাত্র সঙ্গী ছিল পাশের ফ্লাটের আরেক শিশু।

শুক্রবার ছুটির দিনের বিকালে যথারীতি খেলতে বেরিয়েছিল সায়মা। কিন্তু সেদিন সঙ্গী হয়নি অপর শিশুটি। একাই হয়তো পুতুলের বিয়ে দিচ্ছিল সায়মা। কিন্তু সেই নিষ্পাপ শিশু সায়মাও রক্ষা পায়নি ধর্ষকের লোলুপ দৃষ্টি থেকে। শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি মানুষরূপী পশু। পাশবিক অত্যাচারে ক্ষতবিক্ষত সায়মাকে ধর্ষণ শেষে গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। শিশুটি শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছিল তবু বাঁচাতে পারেনি নিজেকে। তার বাবা মাগরিবের নামাজ পড়ে তার জন্য নাশতা এনেছিলেন। খাওয়া হলো না প্রিয় নাশতা।

ওয়ারীর সিলভারডেল স্কুলের ছাত্রী সায়মা জানতেও পারল না তার অপরাধ কী? সুখের ওই ফ্ল্যাটে এখন শোকের মাতম চলছে। এদিকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন ফোরামে সায়মার জন্য শোকগাথা চলছে। খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হচ্ছে।

তারা বলছেন, সায়মা আমার বোন। তার মতো বোন বা মেয়ে প্রত্যেকের ঘরে রয়েছে। তারাও যেকোনো সময় এসব পাশবিকতার শিকার হতে পারে। সমাজে ক্রমশ এসব অপরাধ বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে শিশুদের টার্গেট করা হচ্ছে। এসব ঘটনার বিচার না হলে আমাদের বোনও এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। এজন্য সচেতনমহলসহ সর্বস্তরের মানুষ সায়মা হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।

এদিকে শিশু সায়মাকে ধর্ষণের পর গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় বলে প্রমাণ পেয়েছে ডাক্তাররা।

ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেছেন, ‘বাহ্যিকভাবে শিশুটির গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার আলামত পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তার ঠোঁটে কামড়ের চিহ্ন এবং যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শিশুটির দেহে ধ্বস্তাধস্তির চিহ্ন ছিল। তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। পরে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এসবের আলামত আমরা পেয়েছি।’

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আরও স্পষ্ট হতে হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াবের জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সব নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। এসব প্রতিবেদন পাওয়া গেলে শিশুটির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

ওয়ারী জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার জানান, প্রতিদিনের মতো বিকালের দিকে সায়মা ওপর তলার একটি ফ্ল্যাটে তার সমবয়সী একটি শিশুর সঙ্গে খেলতে বেরিয়ে যায়। ওই ফ্ল্যাটের শিশুটি পরিবারের সঙ্গে বাইরে যাবে বলে জানালে সায়মা বাসার উদ্দেশে লিফটে ওঠে।

মাগরিবের আজানের পর সায়মাকে বাসায় না দেখে খোঁজ শুরু করে তার বাবা-মা। একপর্যায়ে ভবনের সবচেয়ে ওপর তলা অবিক্রীত একটি শূন্য ফ্লাটের ভেতর রান্নাঘরের সিংকের নিচে শিশুটির মৃতদেহ পাওয়া যায়। শিশুটির নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছিল। গলায় রশি পেঁচানো ছিল।

পুলিশ কর্মকর্তা শাহ ইফতেখার বলেন, শনিবার শিশুটির বাবা অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে ওয়ারী থানায় একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই ভবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছয়জনকে জেরা করা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।

 
Electronic Paper