রাজধানীর বাজারদর
শবেবরাতে মাংসের বাজার আরও চড়ার শঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০১৯
এখনই প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম আগের তুলনায় ৭০ টাকা বেশি। এরপরও শবেবরাতকে কেন্দ্র করে আরেক দফা চড়া হতে পারে দাম, এমনটা বলছেন মাংস বিক্রেতারা। তাদের দাবি, শবেবরাত উপলক্ষে চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। এই সুযোগে গাবতলীর পশুহাটে ইজারাদাররা অতিরিক্ত খাজনা আদায় শুরু করেছে। যার প্রভাবে মাংসের দাম বাড়বে।
যদিও ভোক্তা ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কয়েক মাস থেকেই এসব অভিযোগে মাংসের দাম অস্থিতিশীল করে রেখেছে খোদ বিক্রেতারাই। আর প্রতি বছরের মতো এবারও তারা শবেবরাতকে নতুন অজুহাত হিসেবে দাঁড় করছেন। অতিরিক্ত চাহিদার সুযোগ তারা নেবেই।
প্রসঙ্গত, ভারত থেকে গরু আনায় কড়াকড়ি, পথে চাঁদাবাজি আর গরুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের কারণ দেখিয়ে বাজারে ৫৫০ টাকা দরে মাংস বিক্রি হচ্ছে।
যেখানে দুই মাস আগেও এক কেজি গরুর মাংস ৪৮০ টাকায় মিলতো। তবে সরকারের সংশ্লিষ্টরা এও বলছেন, রমজান মাস শুরুর আগে মাংসের দাম নির্ধারণ করে থাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বাধ্য হয়েই এ নির্ধারিত দাম অনুসরণ করতে হয় মাংস বিক্রেতাদের। আর এ সুযোগই কাজে লাগাতে বৈঠকের বেশ কয়েক মাস আগেই গরুর মাংসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। যাতে এ দামের থেকে অল্প কিছু কমিয়ে রমজানের দাম নির্ধারণ হয়।
রাজধানীর শাহাজানপুর এলাকায় খিলগাঁও ফ্লাইওভারের একপ্রান্ত যেখানে শুরু হয়েছে সেখানে পাশাপাশি দুটি মাংসের দোকানে আশপাশের এলাকার বেশ কয়েকজন মাংস কিনতে আসেন। কারণ, ওখানে সব সময় রাখা থাকে কয়েকটি গরু, যেগুলোর মাংস পর্যায়ক্রমে ব্যানার টাঙিয়ে ৪৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কিন্তু, গতকাল সেখানে গিয়ে ওইসব ব্যানার আর মিললো না। সেসব দোকানেও মাংসের দর উঠেছে ৫৫০ টাকা।
প্রশ্ন করা হলে সেখানে খলিল মাংস বিতানের নিয়ামতউল্লাহ বলেন, ‘আমরা সব সময় বাজারদরের থেকে কমে মাংস বিক্রি করে আসছি। কিন্তু এখন আর পারছি না। গরুর দাম বাড়া ও খাজনার কারণে কয়েক দিন হলো নতুন দাম চলছে। আর কাল-পরশু আরও বাড়তে পারে দাম। কারণ তখন খরচ আরও বাড়বে।’
রাজধানীর আরও বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গতকাল সকাল থেকেই গরুর মাংস কেনার জন্য ক্রেতাদের ভিড় ছিল। যেটা আজ আরও বাড়বে। যেসব দোকানে একটি গরু জবাই করা হতো সেখানে তিন-চারটি করা হচ্ছে। তবে এরপরও কোথাও কমদামে মাংস মিলছে না। কিছু এলাকায় মাংসের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা।
কারওয়ান বাজারে এসে বিক্রেতা মহিদুল জানান, আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) তিনি দুইটা গরু বেশি জবাই করেছিলেন। শবেবরাতের জন্য রোববার পর্যন্ত এমন চাহিদা থাকবে। তবে একটা গরুতে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা বেশি খাজনা দিতে হচ্ছে। এজন্য দাম বেশি পড়ছে।
এদিকে বেশি দামে মাংস বিক্রি সম্পর্কে ঢাকা মেট্রোপলিটন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ‘খাজনা আদায় করা হয় লুটের মতো। সরকার সেটা দেখে না, শুধু মাংসের দাম বাড়লে ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করে। আমরা সাধে নয়, বাধ্য হয়ে দাম বাড়াই।’
শবেবরাতে বাড়তি দাম আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরাও চাই না কোথাও বেশি দামে মাংস বিক্রি হোক। কিন্তু কিছু করার নেই। লোকসান দিয়ে আর কত ব্যবসা করা যায়?’
মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসন্ন রমজান মাসে গরুর মাংসের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। তবে সিটি করপোরেশন প্রতি রমজানে দাম নির্ধারণ করে দেয়, সেটা হলে ভিন্ন কথা। কিন্তু এ দাম কার্যকর থাকে ২০ রমজান পর্যন্ত। ঈদের আগে মাংসের দাম আবারো অজুহাত দেখিয়ে বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ অবস্থায় মাংসের ক্রেতারা যে ব্রয়লার মুরগি দিয়ে চালিয়ে নেবেন-তাতেও স্বস্তি নেই। কারণ বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম এখনো কমেনি। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা দরে। সঙ্গে বাড়তি কর্কসহ দেশি মুরগি ও হাঁসের দামও। অন্যদিকে চড়ামূল্যেই স্থিতিশীল রয়ে গেছে বিভিন্ন প্রকার সবজি। অধিকাংশ সবজি কিনতে গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা বা তার বেশি।