চিকিৎসা নিতে এসে ধরা খেল ‘ছিনতাইকারী’
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৭:২৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০১৯
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১টা। রাজধানীর গুলিস্তান পার্ক এলাকা। একটি ব্যাগ হাতে নবাবপুরের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সুজাউদ্দিন তালুকদার। হঠাৎ মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আসা একদল ছিনতাইকারী তার পথরোধ করে দাঁড়ায়। ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তার ব্যাগটি। তিনি বাঁধা দিলে গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। এরপর তারা ব্যাগ নিয়ে কেটে পড়ে। আহত অবস্থায় তাকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
কিছু সময় পর জাহিদুল ইসলাম সোহাগ নামের আরেক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান। একপর্যায়ে পুলিশ এসে তাকে ঘিরে ধরে এবং জানায়, তিনি ওই ছিনতাইকারী দলেরই সদস্য।
শনিবার দুপুরে ঘটে এ ঘটনা। ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার মিশু বিশ্বাস সমকালকে বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা সোহাগকে ছিনতাইকারী হিসেবে শনাক্ত করেছে। আপাতত পুলিশের নজরদারিতে তার চিকিৎসা চলছে। পাশাপাশি বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। নিশ্চিত হলে এ ঘটনায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে। ছিনতাইয়ে জড়িত অপর দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আহত সুজাউদ্দিন তালুকদার ঢামেক হাসপাতালে জানান, তিনি নাভানা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের নির্বাহী কর্মকর্তা। হেঁটে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীরা তার ওপর চড়াও হয়। তার বাম উরুতে গুলি লেগেছে। ছিনতাই হওয়া ব্যাগে কোনো নগদ টাকা ছিল না। তবে তার অফিসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও চেক ছিল। সন্দেহভাজন ছিনতাইকারী সোহাগকে চিনতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মনির হোসেন জানান, মতিঝিলের দিক থেকে এসে নবাবপুরের দিকে যাচ্ছিলেন ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তি। এ সময় বিপরীত দিকে থেকে একটি মোটরসাইকেলে দুজন ও অটোরিকশায় তিন-চারজন এসে তাকে মারধর শুরু করে। তারা কয়েকজন এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তখনই দুর্বৃত্তরা গুলি ছোড়ায় ভয়ে পিছিয়ে যান। পরে তারা আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হক নয়ন বলেন, ব্যাগটি ছিনিয়ে নেওয়ার সময় সুজাউদ্দিনের সঙ্গে ছিনতাইকারী সোহাগের ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় সোহাগ পিস্তল বের করে গুলি ছোড়েন। সুজাউদ্দিনের বাম পায়ে গুলি লাগে। ধস্তাধস্তির ফলে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে একটি গুলি সোহাগের পায়েও বিদ্ধ হয়। তখন ছিনিয়ে নেওয়া ব্যাগটি এক সহযোগীর হাতে দিয়ে দেন সোহাগ। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী হাসপাতালে এসে তাকে শনাক্ত করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে চারটি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এদিকে গুলিবিদ্ধ সোহাগের ভাষ্য, তিনি পেশায় ট্রাকচালক। তার বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায়। শনিবার সকালে তিনি গুলিস্তানে আসেন। ছিনতাইয়ের ঘটনার সময় ওই পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় একটি গুলি এসে তার পায়ে লাগে।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলের আশেপাশের কোনো ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরায় ছিনতাইয়ের দৃশ্য ধরা পড়েছে কিনা তা খোঁজ করে দেখা হচ্ছে।