সড়কে ৪ বিজ্ঞানীর মৃত্যু, স্মৃতিরক্ষা ও ন্যায় বিচারের দাবি
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
🕐 ৬:০৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২২
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চার তরুণ বিজ্ঞানীর নামে গবেষণাগারের নামকরণ, স্মারক স্তম্ভ নির্মাণ, নিরাপদ সড়ক আইনের কঠোর বাস্তবায়ন এবং সড়ক দুর্ঘটনারোধে প্রধানমন্ত্রীর ৩০টি নির্দেশনার কঠোর বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
সোমবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। গত ৫ জুন সাভারের বলিয়ারপুরে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চারজন বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী ৬ মাসের অন্তঃসত্বা পূজা সরকার, ড. মো. আরিফুজ্জামান, ফারহানা নিপা ও প্রকৌশলী কাওসার আহমেদ রাব্বী নিহত হন। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে উদ্যোগ গ্রহণ এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে 'নিহত বিজ্ঞানীদের পরিবারবর্গ, আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীগণ'।
এ সময় সাভারের সড়ক দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বাসমালিকসহ দোষী ব্যক্তিদের অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, বিজ্ঞানী পূজা সরকারসহ নিহত অন্য বিজ্ঞানীদের প্রত্যেকের নামে পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি করে গবেষণাগারের নামকরণ করা, কমিশন প্রাঙ্গণে স্মারক স্তম্ভ নির্মাণ করা, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরমাণু শক্তি কমিশনের বিজ্ঞানীদের বহনকারী বাসটি পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রাঙ্গণে সংরক্ষণ করা, নিরাপদ সড়ক আইনের কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এবং ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রী যে ৩০টি নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলোর কঠোর বাস্তবায়ন করার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক বলেন, এই সবগুলো দাবি খুব যৌক্তিক দাবী। এই দাবি কেন করতে হবে সেটি বুঝতে পারছি না। এই যে আপনারা বলছেন চালকের লাইসেন্স ছিল না, আসলে লাইসেন্স বের করা তো কঠিন কিছু না। শুধুমাত্র ৪-৫ হাজার টাকার ব্যাপার। লাইসেন্সের পরীক্ষা অনেক কঠিন, পাশ করা সহজ না। গাড়ির ফিটনেসের কাগজও একইভাবে বের করে তারা। এজন্য গাড়ি নিয়ে যাওয়ারও প্রয়োজন মনে করে না তারা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
৫ দফা দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, উদীয়মান তরুণ এসব বিজ্ঞানীদের এভাবে অকালে চলে যাওয়া মানে একেকটা স্বপ্নের মৃত্যু হওয়া, স্বপ্নকে হত্যা করা। এই হত্যাকাণ্ড প্রতিদিন ঘটছে। বিজ্ঞানীতো বড় ব্যাপার, একজন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হলেও একটা স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে। শুধু সেই মানুষগুলোর স্বপ্নের মৃত্যুই ঘটে না, পুরো পরিবারের স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে।
সংসদ সদস্য শিরিন আখতার বলেন, আইন সম্পর্কে সবাই সচেতন হলে সড়কে দুর্ঘটনা কমবে। সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে কঠোর হতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা নিহত হয়েছেন এরা কারা, তারা পরমাণু বিজ্ঞানী। বাংলাদেশের কঠিনতম অবস্থায় তারা জ্ঞান বিজ্ঞানে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছিল। এই বিজ্ঞানীরা যখন একসাথে মারা যান, তখন জাতির বিবেক জেগে উঠে না তাহলে আমরা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি। আমরা বিবেকহীন হয়ে যাচ্ছি। নিজেদের চিন্তায় এত বিভোর যে পাশেই কি হচ্ছে তা খেয়াল করার সময় নেই। সড়ক দূর্ঘটনা এখন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে গেছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বিজ্ঞানী পূজা সরকারের বাবা অমল সরকার বলেন, মাত্র ছয় বছর বয়সেই আমার মেয়ে পূজা সরকার তার মাকে হারায়। আমি একাই তাকে মানুষ করেছিলাম। ওর জীবনটা যখন গুছিয়ে এনেছিল, ঠিক তখনই এই দুর্ঘটনা ওকে কেড়ে নিল। আমি একজন হতভাগ্য পিতা। আমি ওকে জন্ম দিয়েছি, কিন্তু ওর জীবন রক্ষা করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, সড়ক নামক মৃত্যুকূপে হারিয়ে গেছে আমার মেয়ে। ওর অনেক স্বপ্ন ছিল, সেটি অধরাই থেকে গেল। দুর্ঘটনার দেড় মাস হয়ে গেল, এখনো এই দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের পুলিশ ধরতে পারেনি। বিচার দেরিতে হওয়া মানে বিচার না হওয়া। আমি চাই এই দুর্ঘটনার সঠিক বিচার হোক। যাতে এভাবে সড়কে আর কারো মৃত্যু না হয়।
এ সময় পিপলস ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী, সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মানিক চন্দ্র দে, যাত্রীকল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী, সমাজসেবক হাসান মঞ্জুর, কর্মজীবী নারীদের পক্ষে শেখ শাহনাজ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মানববন্ধন শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয় একই দাবিতে।