মিরপুরে কুকুর নিধন, প্রাণীপ্রেমীদের হত্যার হুমকি
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
🕐 ৫:০৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২২
রাজধানীর মিরপুরে বিজয় রাকিন সিটিতে ঘোষণা দিয়ে কুকুর নিধন করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। প্রাণীপ্রেমীরা এ কাজে বাধা দিলে তাদেরও হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চক্রটি হোয়াইটস অ্যাপ গ্রুপে ঘোষণা দিয়ে কুকুর নিধনের মতো আইনবিরোধী কাজে লিপ্ত হয়েছে। এ বিষয়ে প্রাণীপ্রেমীরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ অভিযোগ নেয়নি। পরে সরাসরি পুলিশ প্রধান বরাবর অভিযোগ করেছেন সেখানকার প্রাণীপ্রেমী বাসিন্দা ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী।
রাকিন সিটির বাসিন্দাদের অভিযোগ, কিছুদিন ধরে রাত হলেই সিটির বাসিন্দা রেজাউর রহমানের নেতৃত্বে আবুল কাশেম, তাজুল ইসলাম, মাহমুদ হাসান, মাহমুদ এ খোদা, শহীদ হোসেন কুকুর নিধন করছেন। একই অভিযোগ তুলেছে প্রাণী সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘অ্যানিম্যাল প্লানেট বাংলাদেশ’।
সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতেও সেখানে কুকুর নিধনের একটি ভিডিও দৈনিক খোলাকাগজের হাতে এসে পৌঁছেছে। এছাড়া এই সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথপোকথন ও কুকুর হত্যার একাধিক ভিডিও পাওয়া গেছে।
গত ৪ জুলাই বিকেলে অ্যানিমেল প্ল্যানেট বাংলাদেশের দুই স্বেচ্ছাসেবী অভিজিৎ দাস ও আজিজুল হাকিম হানি কুকুরগুলোকে ভ্যাকসিনেশন করতে গেলে রেজাউর রহমানের নেতৃত্বে ৪-৫ জন তাদের হুমকি দেন ও মারতে উদ্যত হন। এ বিষয়ে কাফরুল থানায় অভিযোগ করতে গেলে অভিযোগ নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন মিরপুর বিজয় রাকিন সিটির বাসিন্দা স্বপ্ন চৌধুরী।
পরে সিটির বাসিন্দা ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ বরাবর এ বিষয়ে অভিযোগ করেন।
শামীম চৌধুরী খোলাকাগজকে বলেন, কোভিডের সময় সবকিছু যখন বন্ধ ছিল, তখন কুকুরগুলো খাবার না পেয়ে চিৎকার করতো। তারপর আমার স্ত্রীকে বলে প্রাণীগুলোর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করি। কুকুরগুলোকে ভ্যাকসিন দেওয়া আছে। কিন্তু হঠাৎ বাইরে থেকে আসা একটি কুকুর গত ৪ জুলাই এখানকার এক বাচ্চাকে নাকি আক্রমণ করে। ওই ঘটনার পর কিছু মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে রাতে কুকুর হত্যায় মেতে ওঠেন। বাধা দিতে গেলে তারা আমার ছেলেকে হুমকি ধামকিও দিয়েছেন। প্রত্যেক প্রাণীর বাঁচার অধিকার আছে, দেশে আইন আছে, চাইলেই এভাবে কুকুর মারা যায় না।
স্বপ্ন চৌধুরী বলেন, ঘটনা ঘটে ঠিক রাত সাড়ে নয়টা থেকে দশটার মধ্যে (৪ জুলাই)। আমাকে বিকেলে খবর দেওয়া হয় দারোয়ানকে দিয়ে যে একটা কুকুর নাকি একটা বাচ্চাকে কামড়েছে। তখন আমি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত ভলান্টিয়ার এনে প্রাণিকল্যাণ আইন ২০১৯ অনুযায়ী কুকুরটাকে ধরার চেষ্টা চালাই। চার ঘণ্টা টানা চেষ্টার পরও সেটাকে ধরা যায়নি।
তিনি বলেন, কুকুর হত্যায় বাধা দিতে গেলে সংঘবদ্ধ লোকজন আমাদের মারতে উদ্যত হয়, তবে কয়েকজন লোক এসে আমাদের সরিয়ে নিয়ে যায়। ঘটনার থেকে তারা উৎসবের মতো করে কুকুর নিধন শুরু করে। আর আমিসহ এলাকার বাকি প্রাণীপ্রেমী মানুষদের বাসার সামনে গিয়ে সপরিবারে হত্যার হুমকি দেয়। এলাকায় এখনও মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে, খুব বেশি কেউ নিচে নামছে না।
এদিকে কুকুর নিধনের অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত রেজাউর রহমানের বক্তব্য নিতে ফোন করা হলে তিনি বলেন, আপনাকে আমি চিনি না। অপরিচিতদের সাথে আমি কথা বলি না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা খোকন হোসেন বলেন, প্রাণীহত্যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে সিটি করপোরেশন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
কাফরুল থানার ডিউটি অফিসার সাদ্দাম হোসেনকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জানান, এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।