ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বড়শির ছিপ ফেলে পেটে ভাত জোটে তিন বোনের

মো. মাহমুদুল হাসান, তালতলী (বরগুনা)
🕐 ১২:১৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৬, ২০২১

বড়শির ছিপ ফেলে পেটে ভাত জোটে তিন বোনের

বড়শিতে নির্ভর করেই চলছে তালতলী উপজেলার নিউপাড়া এলাকার তিন বোনের সংসার। রাহিমা বেগম (৬০), ফাতেমা বেগম (৫৫) ও জরিনা বেগম (৫০)-এই তিন বোনের ছোট সময়ে বিয়ে হয়ে যায়।

বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় স্বামীদের অভাবের সংসারের হাল ধরেন তারা। পেটের দায়ে খালে-বিলে বড়শি দিয়ে ৩০ বছর যাবৎ মাছ শিকার করেন তারা। ছোট নদ-নদী কিংবা খালে নৌকায় বসে বড়শির ছিপ ফেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে মাছ ধরেন তারা। সে সব মাছ বিক্রি করেই চলে তাদের জীবিকা। তবে নদ-নদীর নাব্য সংকটে দিন দিন মাছ কমে যাওয়ায় কোনো মতে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে এই তিন বোনের।

তবে এ পর্যন্ত সরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি তারা। এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বারও কোনো সহযোগিতা দেয়নি। তিন বোনের সাথে কথা হলে তারা বলেন স্লুইসগেটের কাছের নদীতে মাছ থাকলে তাদের সংসারের সব সদস্যের পেটে ভাত জোটে। মাছ না থাকলে ভাতও জোটে না। তবুও জীবন সংসার চালাতে বাবার বড়শির ছিপ ৩০ বছর যাবৎ ধরে আছি। আর বসবাস করার ঘরগুলো তেমন ভালো না।

স্থানীয়রা জানান, তাদের জীবন খুব কষ্টে কাটে তাই তারা এই পেশাকে বেছে নিয়েছেন। তারা তিন আপন বোনের প্রায় ৩০ বছরের উপরে এই স্লুাইস গেটে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করে কোনো মতে সংসার চলছে।

বড় বোন রাহিমা বেগম বলেন, বাবা সেই ছোট বেলা গরিব ঘরে বিয়ে দিয়েছেন। সংসারে যে সুখ আছে তা কখনো চোখে দেখিনি। তাই সংসার চালাতে ধরতে হয়েছে বড়শির ছিপ। আমার বাবাও বড়শি ছিপ ফেলে মাছ ধরে আমাদের সংসার চালাইছে।

মেজো বোন ফাতিমা বেগম বলেন, বিয়ের দিন থেকেই স্বামীর ঘরে অভাব-অনাটন দেখে দেখে সংসার চলছে। জীনব সংগ্রাম কম করিনি স্বামীর সংসারে একটু সুখ দেখার জন্য। এই বড়শির ছিপে পেটে ভাত জুটে এখন। নদীতে মাছ না থাকলে আমার পরিবারের ৩ জন মানুষের ভাত জোটে না। সরকারি কোনো ধরনের সুযোগ সুবিধা আজও পাইনি। ছোট বোন জরিনা বেগম বলেন, অভাব-অনাটনের ভিতরেই আমাদের জীবন চলে যায়। তবুও সরকারি কোনো সহযোগিতা পাই না। যদিও কিছু দেওয়া নাম করে তবে বিনিময়ে টাকা দিতে হয়ে। টাকাও দিতে পারি না আর সরকারি সহযোগিতাও পাই না।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য জলিল রাঢ়ীর ফোনে একাধিকার ফোন দিলে মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওছার হোসেন বলেন, বিষয়টি আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখে সরকারি সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। আগামী সোমবারই আমার অফিসে তাদের তিন বোনকে ডাকা হবে।

তালতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজবি উল কবির জোমাদ্দার বলেন, এই তিন বোনকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

 
Electronic Paper