ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস চলে গেলেও রেখে গেছে ক্ষত চিহ্ন

সোলায়মান পিন্টু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
🕐 ৭:৩৫ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২১

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস চলে গেলেও রেখে গেছে ক্ষত চিহ্ন

ঘূর্র্ণিঝড় ইয়াস যে ক্ষত চিহ্ন রেখে গেছে তা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন উপকূলীয় অঞ্চল পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মানুষ। ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সৈকত, লালুয়া, মহিপুর, নীলগঞ্জ ও চম্পাপুর। চিরচেনা সৈকত এখন অচেনা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। পুরো সৈকত লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস চলে গেলেও সেই ক্ষতচিহ্ন রয়ে গেছে পুরো উপকূল জুড়ে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ইয়াসের তাণ্ডবে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে উপজেলার নিজামপুরের সদ্য নির্মিত বেরিবাঁধে। বাঁধের ৬টি ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছিল সুধীরপুর, নিজামপুর, কমরপুরসহ আশেপাশের এলাকা। যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নিজকাটা স্লুইজ গেটের বাঁধ। ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর বোরিবাঁধেও। প্রায় আড়াই কিলোমিটার বেরিবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে দেবপুর, চালিতাবুনিয়া, পাঁচজুনিয়া বলে জানান চম্পাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার।

ঢেউয়ের তাণ্ডবে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার বালু ভর্তি জিও টিউব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকটি জিও টিউব ঢেউয়ের ঝপটায় ফেটে বালু বের হয়ে গেছে। জিও টিউবের পাশের বালু সরে গিয়ে সমতল সৈকতে পুকুরে পরিণত হয়েছে। সৈকতের পাশের পাবলিক টয়লেটের দুই তৃতীয়াংশ ভেঙে গেছে। সৈকতের বেশ কিছু দোকান ভেঙে চুরমার হয়ে ভেসে গেছে সমুদ্রে। সৈকত লাগোয়া আবাসিক হোটেল কিংস ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছে। সৈকতের জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন সরদার মার্কেটের অর্ধেক ঢেউয়ের ঝাপটায় ভেঙে ভেসে গেছে। জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব দিকে গঙ্গামতি পর্যন্ত সৈকতের সংরক্ষিত বনের শত শত গাছপালা উপড়ে যেখানে সেখানে পড়ে আছে। ক্ষতি হয়েছে পর্যটকদের বিনোদন কেন্দ্র কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যানের।

সৈকতের ঝাউবন, নারিকেল কুঞ্জ, তালবাগান, শালবনসহ শুঁটকি পল্লী তছনছ হয়ে গেছে। লালুয়ার চান্দুপাড়া অংশের বেরিবাঁধে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এই তথ্য জানিয়েছেন লালুয়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মীর তারিকুজ্জামান তারা। ফলে লালুয়ার অনেক গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল ফ্রেন্ডস্ কিংয়ের মালিক আরিফ সুমন বলেন, এখন পুরো সৈকত অচেনা লাগে। যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ধ্বংসস্তুপ। ইয়াসের ঢেউয়ের তাণ্ডবে সৈকতের সৌন্দর্য পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কেটে গেছে ঠিকই কিন্তু সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট করে দিয়ে গেছে। এখন সবাইকে উদ্যোগ নিয়ে সৈকতের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে হবে।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, পূর্নিমা ও ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট ৫/৬ ফুট উচ্চতার পানিতে উপজেলার অনেক মাছের ঘের ও পুকুর তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। এসব ঘের ও পুকুরের মালিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখেছি কিছু পুকর ও ঘের মালিক জাল দিয়ে মাছ রক্ষা করতে পেরেছে। কলাপাড়া উপজেলার মৎস্য চাষীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কোটি কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে চিংড়ি ঘেরের ক্ষতি হয়েছে বেশি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম ছালেহী জানান, যে সকল বেরিবাঁধ ঝুঁকিতে রযেছে সেখানে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

 

 
Electronic Paper