ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বৃক্ষের অভাবে বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যু

সুনান বিন মাহাবুব, পটুয়াখালী প্রতিনিধি
🕐 ১:৩০ অপরাহ্ণ, মে ১০, ২০২১

বৃক্ষের অভাবে বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যু

২০১৬ সালে বজ্রপাতে বাংলাদেশে প্রায় ৩৫০ জন মানুষ মারা যাওয়ার পর সরকার বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে। পটুয়াখালী জেলায় গত বছর এই মৌসুমে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল প্রায় ১২ জন। এ বছর পটুয়াখালী জেলায় বজ্রপাতে মানুষ এবং গবাদি পশুর মৃত্যুর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বজ্রপাতের প্রবণতাও বাড়ছে। ইতোমধ্যে বজ্রপাতে পটুয়াখালী জেলায় প্রায় ৫ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে পটুয়াখালী সদর উপজেলায় ইব্রাহিম হাওলাদার (২৫) নামে এক যুবক নিহত হয় এবং গলাচিপায় মোস্তাফিজ (১৪) ও মনির আকন (৩৫) নামে দুইজন নিহত হয়েছে। এছাড়াও দুমকিতে এবং মির্জাগঞ্জেও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। পটুয়াখালীর আঞ্চলিক আবহাওয়াবিদদের পর্যবেক্ষণে এই জেলার গলাচিপা-রাঙ্গাবালী উপজেলা বজ্রপাত প্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পটুয়াখালী জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ খোলা প্রান্তর ও বজ্র নিরোধক বৃক্ষের অভাব। শহরাঞ্চলের অনেক বাসাবাড়িই এখন বজ্র নিরোধক। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে বজ্র প্রতিরোধক হয়ে কাজ করে বিশাল বৃক্ষ। এছাড়াও গ্রীষ্মকালে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকায় বজ্রপাতের ভয়াবহ পরিস্থিতির তৈরি হয়। তাদের মতে, বছরের মে মাসে পটুয়াখালী জেলায় সবচেয়ে বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা বেশি। এই সময়ে কৃষকেরা মাঠে কাজ করে এবং সেই মুহুর্তে বজ্রপাত হলে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। এ সকল অঞ্চলে বড় বৃক্ষ তালগাছ, নারিকেল গাছ কম রোপণ করায় মাঠে বজ্রপাতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পটুয়াখালী ব্র্যাক এর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পটুয়াখালীতে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রধাণ কারন উঁচু বা লম্বা গাছপালা কেটে ফেলা। মাঠে বা রাস্তার পাশে বড় বৃক্ষ থাকলে ঐ বৃক্ষেই বজ্রপাত হতো, গাছ টেনে নিত। কিন্তু সেটা না থাকায় খোলা মাঠ, হাওর বা নদীতে বজ্রপাতের কারণে মানুষ মারা যাচ্ছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বলেন, তালগাছের মতো গাছগুলো খোলা মাঠে রোপণ করা উচিত। তাহলেই এটি বজ্রপাতে বেশি কাজে দেবে। পটুয়াখালী জেলায় বেশিরভাগ বজ্রপাতে মৃত্যু ঘটে কৃষক যখন মাঠে কাজ করে সেই অবস্থায়। তাই গ্রাম-গঞ্জের মাঠে এবং রাস্তার পাশে বড় বৃক্ষ রোপণ করতে হবে।

পটুয়াখালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিসের কর্মকর্তারা জানান, সরকার বজ্রপাত রোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ২৮ লাখ তালগাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল এবং তা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু যেহেতু তালগাছ বড় হতে সময় লাগে তাই গ্রামগঞ্জে এ সকল তালগাছ এখনও বজ্রপাত নিরোধক হিসেবে কাজ করছে না। তাল, নারকেল, বটসহ নানা ধরনের বড় গাছ বজ্রপাতের আঘাত নিজের শরীরে নিয়ে নেয়। আগে নিজ উদ্যোগে গ্রামগঞ্জের মানুষ এ ধরনের গাছ বেশি রোপণ করতো। ফলে বজ্রপাত হলেও মানুষ বেঁচে যেত।

 
Electronic Paper