ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দশমিনায় অবাধে চলছে চিংড়ি রেণু ধরা ও বিক্রি

দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
🕐 ৫:০৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২১

দশমিনায় অবাধে চলছে চিংড়ি রেণু ধরা ও বিক্রি

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে উপকূলীয় পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চিংড়ির রেণু ধরা চলছে অবাধে। ২০০০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে উপকূলীয় এলাকা থেকে বাগদা চিংড়ির পোনা আহরণ নিষিদ্ধ করেছে। রেণু পোনা আহরণে জেলেদের উৎসাহিত করছেন সরকার দলীয় নেতারাও। এর মধ্যেই গড়ে উঠেছে রেণু পাচারের একাধিক সিন্ডিকেট। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা নির্বিচারে নষ্ট হচ্ছে । তেতুঁলিয়া ও বুড়াগৌরঙ্গ নদীতে রেণু পোনা আহরণের মহোৎসবের কারণে দিন দিন অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে গলদা-বাগদাসহ নানা প্রজাতির মাছ।

সরকারদলীয় এক নেতাসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়েই রাতের আঁধারে পাচার হচ্ছে রেণু। সংশ্লিষ্টরা তদারকি না করায় ও আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়ায় এভাবে অবাধে মাছের পোনা নিধন চলছে। একাধিক সিন্ডিকেট পদে পদে টাকা দিয়ে রেণু পাচার করছেন দেশের বিভিন্ন এলাকায় । প্রতি বছর বৈশাখ থেকে আষাঢ় রেণু শিকারে মেতে ওঠে সব বয়সের নারী-পুরুষ। মহাজন ও মৌসুমী সিন্ডিকেটের থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে রেণু শিকার করছে তারা। আর এ পোনা তেতুঁলিয়া নদীর পাড়ে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে। পরবর্তীতে রাতের আঁধারে খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভালো আয়ের সুযোগ থাকায় রেণু আহরণ ঝুঁকছেন জেলেরা।

অতি ক্ষুদ্র হওয়ায় এসব পোনা ধরতে মশারি জাল ও ছাকনি ব্যবহার করা হয়। এ সময় চিংড়ির সঙ্গে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য পোনা উঠে আসে। চিংড়ির পোনা বাছাইয়ের সময় অর্ধশতাধিক প্রজাতির মাছের ডিম ও পোনা নষ্ট হয়ে যায়। পোনা শিকারীরা বলেন, বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় তারা এই রেণুপোনা শিকার করছেন। রেণু পোনা ধরায় লাভ বেশি। এক-দুই টাকা দরে বিক্রি করেন। আর মহাজনরা তা বেশি দামে বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করেন।

জানা গেছে, দশমিনার আজবোগী গ্রামের রেণু পোনা পাচারের অন্যতম সিন্ডিকেট মাহবুল। তিনি জেলেদের রেণু আহরণে উৎসাহিত করছেন। জেলেদের থেকে কম দামে রেণু কিনে তা পরে মোটা অংকে বিক্রি করছেন। বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে পদে পদে টাকা খচর করে খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরায় রেণু পাচার করছেন। রাতের আঁধারে প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে রেণু পাচার করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া শাহিন নামে এক উপজেলা মৎস্যজীবী লীগ নেতাও জড়িত আছেন রেণু পাচার সিন্ডিকেটের সাথে। তিনি জেলেদের রেণু পোনা আহরণের জন্য উৎসাহিত করছেন বলে অভিযোগ। প্রকাশ্যে গলদা পোনা ক্রয়-বিক্রয় করেন তিনি।

এই মৎস্যজীবী লীগ নেতা ছাড়াও একাধিক গলদা পোনা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা লাখ লাখ টাকা নিয়ে রেণু পাচারে মাঠে নেমেছেন বলে একাধিক সূত্র জানায়। সূত্রের দেয়া তথ্যমতে, তেঁতুলিয়া নদীর তীরবর্তী মহাজনরা বাঁশবাড়ীয়, ঢনঢনিয়া,হাজিরহাট, গোলখালি, সেয়দজাফর, আউলিয়াপু সাথান থেকে সংগ্রহ করে রেণু মজুদ করে রাত ২-৩টার দিকে রনগোপালদী কিংবা দশমিনা সদর রুটে পিক্যাপভ্যান দিয়ে পাচার করে।

দশমিনা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আবু আব্দুল্লাহ বলেন, রেণু পাচারের বিষয়টি তার জানা নেই। তবে পাচারকালে ধরতে পারলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, আমি আজ শুনলাম রেণু আহরণের কথা। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

 
Electronic Paper