ভাঙনে দিশেহারা গৃহহীনরা
বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
🕐 ২:১৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৮
পটুয়াখালী বাউফলের ধুলিয়া ইউপির ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের জনগণের আহাজারি ‘আর কিছু নাই যে ভাঙবে, যা আছিল সব লইয়্যা গেছে তেতুইলায় (তেঁতুলিয়ায়)। চাইরবার ঘর ভাঙছে, জমি ক্ষেত, হালের বলদ সব শ্যাষ এহন আর কিছুই নাই। রাস্তার পাশে ঝুপড়ি বানাইয়া পোলাপান লইয়া কোনোমতে আছি। এই রাস্তাও মনে হয় টেকবেনা। এরপর কই যামু আমরা? আমনেরো সরকার’রে কন, এমপিরে কন আমাগো লইগ্যা কিছু করতে। এভাবেই কান্না জড়িত কন্ঠে এসব কথা বলছিলেন তেতুঁলিয়ার ভাঙনে গৃহহীন জালাল মিয়া (৪৫)।
শুধু জালাল মিয়াই নয় এমনই আর্তনাদ আজ পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার তেঁতুলিয়া পাড়ের সাধারণ মানুষের।
তেঁতুলিয়া নদীর সর্বগ্রাসী ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এ উপজেলার ধূলিয়া ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। ভাঙনে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধূলিয়া ইউনিয়নের ধূলিয়া পুরান বাজার, নতুন বাজার, বারদিপাড়া, উত্তর ঘুচরাকাঠি ও মঠবাড়িয়া অংশ। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক ঘর বাড়ি। ধূলিয়া-হোসনাবাদ সড়কটির একাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ধূলিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কয়েক হাজার মানুষ।
তেঁতুলিয়ার এ অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে ধূলিয়া দাখিল মাদ্রাসা, ধূলিয়া এনকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধূলিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় মঠবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি ধর্মীয় উপাসানালয়। এছাড়াও হুমকির মুখে রয়েছে ভাষা সৈনিক সৈয়দ আশরাফের সমাধিস্থল।
ধূলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রব বলেন, এ ভাঙন অব্যাহত থাকলে অচিরেই ধূলিয়া বাজার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি ৩টি মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিদিনই গৃহহীন হচ্ছে এখানকার মানুষ। অচিরেই এ ভাঙন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান তিনি।
তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনরোধে করণীয় সম্পর্কে বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিযূষ চন্দ্র দে বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তাৎক্ষণিকভাবে এ ভাঙন রোধে দুই কিলোমিটার এলাকায় ব্লক ফেলা গেলে সুফল পাওয়া যেত। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেছি।
কিন্তু এ ভাঙন রোধে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো উত্তর দিতে পারেননি পানি উন্নয়ন বোর্ডের পটুয়াখালী জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান। তিনি জানান, ধূলিয়ায় ভাঙন রোধে আমাদের একটি প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। এ প্রকল্প অনুমোদন হলে এর কাজ শুরু করা যাবে।
দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রকল্পের কথা শোনা যাচ্ছে কিন্তু এর বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমীক্ষাসহ আরও কিছু কাজ রয়েছে, এরপর প্রস্তাবনা যাবে মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে একনেকে। একনেকে পাশ হবার পর কাজ শুরু করা যাবে।