ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শহীদ আলতাফ মাহমুদের প্রতিষ্ঠানটি দখলের চেষ্টা

বরিশাল ব্যুরো
🕐 ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০১৯

বরিশালে প্রতিষ্ঠিত শহীদ আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয়ের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অমর একুশের গান হিসেবে খ্যাত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র সুরকার সংস্কৃতিকর্মী ও স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের নামে ১৯৭২ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বরিশালের একাধিক সংগীতপ্রেমী, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রভাবশালী এক শিল্পপতি বিদ্যালয়টির জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা যে কোনো মূল্যে শহীদ আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয়ের জমি রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি কামনা করেছেন। পাশাপাশি সংগীত বিদ্যালয়ের জমি রক্ষার জন্য বরিশালের জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করেছেন। জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমানকে বিদ্যালয়টি যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করার কথা জানিয়েছেন।

বিদ্যালয়টির সংগীত শিক্ষক বীণা সেন জানান, ১৯৭২ সালে স্থানীয় সংগীত প্রেমীদের উদ্যোগে অমর একুশে গানের সুরকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের নামে একটি সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮৫ সালে বরিশাল নগরীর সদরের হাসপাতাল রোডের পাশে সাড়ে ১০ শতাংশ জমিসহ একটি একতলা পাকা ভবন বিদ্যালয়টির নামে বরাদ্দ দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আজিজ আহমেদ। সেই থেকে হাসপাতাল রোডের ওই ভবনে শহীদ আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলে আসছে। বিদ্যালয়ের কার্যক্রমসহ বিদ্যুৎ বিল এবং সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়মিত পরিশোধ করা হচ্ছে। তবে ও জমি নগরীর প্রাণকেন্দ্রে এবং মূল্যবান হওয়ায় তাতে দৃষ্টি পড়ে নগরীর প্রভাবশালী এক শিল্পপতির। তিনি ওই জমি আত্মসাৎ করার উদ্দেশে বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়ে যাচ্ছেন।

বরিশাল সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু জানান, শহীদ আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয়ের জমির দিকে প্রায় এক যুগ আগে দৃষ্টি পড়েছে ভূমিদস্যুদের। ১৯৯৯ সালে নগরীর রুপাতলীর জনৈক রফিক উদ্দিন আহমেদ রফিজ ও তার পরিবারের সদস্যরা ওই জমি নিজেদের এবং তাদের ভোগ দখলে আছে উল্লেখ করে জিয়াউদ্দিন হাসান কবির নামে একজনকে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দেয়। কিন্তু জিয়াউদ্দিন হাসান কবির সংগীত বিদ্যালয়ের ওই জমির ধারের কাছেও যেতে পারেননি। ২০০৭ সালে ওই জমি সরকারি গেজেটভুক্ত হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে রফিক উদ্দিন আহমেদ রফিজসহ তার পরিবারের সাত সদস্য ফের ওই জমি তাদের নিজেদের দাবি করে নগরীর তথা কথিত সাদা মনের মানুষ শিল্পপতি বিজয় কৃষ্ণ দে’র স্ত্রী শৈল দে’র কাছে ১৬ লাখ টাকায় রেজিস্ট্রিমূলে বিক্রি করেন।

কিন্তু স্থানীয়দের বাধার মুখে বিজয় কৃষ্ণ দে ওই জমি ভোগ দখলে যেতে পারছিলেন না। ২০১২ সালে বিএস রেকর্ডেও ওই সম্পত্তি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত হয়।

শহীদ আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, সংগীত বিদ্যালয়টি অন্যত্র স্থানান্তর করে ওই জমি দখলের চেষ্টা করেন বিজয় কৃষ্ণ দে। এজন্য বিজয় কৃষ্ণ দে কালীবাড়ি রোডে একটি ভাড়া ঘরও ঠিক করে দেন। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্যত্র যেতে রাজি না হলে ভেস্তে যায় তার পরিকল্পনা। পরে তিনি ২০১২ সালে বরিশালের যুগ্ম জেলা জজ ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আদালতে মামলা করেন।

ভিপি স্যুট মামলায়ও বাদী শৈল দে আদালতকে বিভ্রান্ত করে ওই জমি তাদের ভোগ দখলে আছে বলে উল্লেখ করেন। অথচ গত ২৫ মার্চ বরিশালের যুগ্ম জেলা জজ ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আদালতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ওই জমি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয়কে দেওয়া হয় এবং ১৯৭২ সাল থেকে ওই স্থানে বিদ্যালয়টি সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হয়ে আসছে। ওই জমিতে সরকারের পক্ষে লিজপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাদী শৈল দে বা অন্য কারও কোনো স্বত্ব বা দখল নেই। উল্লেখিত জমি নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে এবং মূল্যবান হওয়ায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশে কিছু কাগজপত্র জাল জালিয়াতির মাধ্যমে মিথ্যা উক্তি ও দাবিতে মামলাটি করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের আবেদনে বলা হয়।

শহীদ আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয়ের সংগীত শিক্ষক বীণা সেন জানান, বরিশালে শহীদ আলতাফ মাহমুদের অন্যান্য স্মৃতিচিহ্ন মুছে গেলেও এ সংগীত বিদ্যালয়ের মাধ্যমে ভাষাসৈনিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ এবং তার অমর সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে পারছিল নতুন প্রজন্ম। দেশ ও জাতির জন্য জীবন দিয়েছেন আলতাফ মাহমুদ। সুতরাং দেশ ও জাতির দায়িত্ব আছে তার নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান রক্ষার। কেউ যদি ওই জমি দখল করতে আসে তাদের স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে প্রতিহত করা হবে।

বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, শহীদ আলতাফ মাহমুদের কাছে পুরো দেশ ঋণী। তার নামের ওই প্রতিষ্ঠানটির জমি যেন বেহাত না হয়ে যায় সেজন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 
Electronic Paper