ইন্দুরকানীতে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে নারী ও শিশু
জন্ম শাসনে অনীহা জেলে পরিবারে
জে আই লাভলু, ইন্দুরকানী
🕐 ৯:৫৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০১৮
উপকূলীয় এলাকা পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে জন্ম নিয়ন্ত্রণে উদাসীন চরাঞ্চল ও জেলে পরিবারের লোকজন। অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার ফলে স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছেন এসব পরিবারের নারীরা। অভাবের সংসারে অধিক সন্তানের ভরণপোষণ দিতে না পারায় পুষ্টিহীনতায় ভুগছে শিশুরা।
উপজেলার সাউথখালী চরে দেড় শতাধিক পরিবারের বসবাস। যারা সবাই দিনমজুর ও জেলে। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে এখানকার প্রতিটি পরিবার। এ এলাকার বাসিন্দা ফরিদা বেগম। তার বয়স ৩৮ বছর। সাত সন্তানের জননী তিনি। স্বামী আব্দুল হক ফরাজী পেশায় দিনমজুর। তার প্রথম স্ত্রীর ঘরেও রয়েছে ছয় সন্তান। ১৬ সদস্যের এ পরিবারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আব্দুল হক একাই। ফরিদা বেগম সাত সন্তানের পাঁচজন নিয়ে আলাদা বসবাস করেন। তিনি সাউথখালী চরের আবাসনের একটি কক্ষে থাকেন।
ফরিদার বড় মেয়ে তানিয়া। বয়স ১৩ বছর। ঢাকায় একটি বাসায় ঝিয়ের কাজ করে। তারপরের মেয়েটি ১১ বছরের মানসুরা। সেও বড় বোনের অনুসারী। তাদের উপার্জন যোগ হয় ফরিদার সংসারে। ফরিদার সবার ছোট ছেলের বয়স মাত্র আট মাস। স্বামী আব্দুল হক ফরিদার তেমন কোনো খোঁজ-খবর রাখেন না। তারপরও জীবিকার দায়ে শিশু সন্তানদের নিয়ে বলেশ্বর নদে জাল দিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করেন ফরিদা। এভাবেই কোনো মতে তার সংসার চলে যাচ্ছে।
ফরিদার মতো সাউথখালী চরের অধিকাংশ পরিবারে রয়েছে বহু সন্তান। নিম্ন আয়ের এ মানুষগুলো জন্ম নিয়ন্ত্রণে অনাগ্রহী। এখানে যেমন বহু বিবাহের প্রচলন রয়েছে, তেমনি রয়েছে তালাকের প্রবণতাও। এসব পরিবার প্রধানরা জন্ম নিয়ন্ত্রণে অনাগ্রহী হওয়ায় তাদের পরিবারে শিশু সদস্যের সংখ্যাও বেশি। ফলে দারিদ্র্যতা ও অপুষ্টি যেন তাদের পেয়ে বসেছে। অধিক সন্তানকে আয়ের উৎস বলে মনে করেন তারা। শিশু বয়সেই সবাই বাবাকে মাছ ধরাসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় মূল শহরেও তাদের যাতায়াত কম। সব মিলিয়ে সচেতনতার অভাবেই তারা জন্ম নিয়ন্ত্রণে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
সাউথখালী চরে নারীদের সঙ্গে জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কথা বলতে গেলে তারা মুখ ফিরিয়ে নেন। এ বিষয়ে কথা বলতেই নারাজ তারা। তারপরও কয়েকজন জানান, জন্ম নিয়ন্ত্রণের যে পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য বলা হয়, তা সব সময় সঠিকভাবে করা হয় না। এক্ষেত্রে তারা নিজেদের স্বল্প শিক্ষাকে অনেকটা দায়ী করেন। সন্তান কম থাকলে বৃদ্ধ বয়সে তাদের দেখার কেউ থাকবে বলে অনেকেই মনে করেন। তাই জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে অনেকেই উদাসীন।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্রে জানা যায়, সাউথখালী চরে জনসংখ্যা ৭০০ জন। ২০১৮ সালে এর কিছুটা ব্যবধান হতে পারে বলেও জানান ভারপ্রাপ্ত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
তবে ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী জানান, সাউথখালী চরে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষের বসবাস। সেখানের মানুষের রয়েছে নানামুখী সমস্যা। ইন্দুরকানী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদটি শূন্য। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দিয়ে চলছে এ পদের কার্যক্রম। এছাড়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের তিনটি পদই শূন্য। আবার ১৭টি ইউনিটের চার ইউনিটে কোনো কর্মী নেই।
পরিবার কল্যাণ সহকারী মারুফা জানান, আমি প্রতি দুই মাস অন্তর চরে যাই। জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তাদের অনেকভাবে বোঝানো হয়। কিন্তু কিছু পরিবার এ ব্যাপারে উদাসীন। তাদের কোনোভাবেই বোঝাতে পারি না।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. সোহাগ হোসেন জানান, জেলে প্রধান এলাকার মানুষেরা জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে অনাগ্রহী। তাদের নানাভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণের উপকারিতা জানানো হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয় না। আমারা আবাসন ও চরাঞ্চলকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি।