ভোলায় সংঘর্ষ
পরিস্থিতি থমথমে, মুসলিম ঐক্যের সমাবেশ স্থগিত
ভোলা প্রতিনিধি
🕐 ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০১৯
ভোলার বোরহানউদ্দিনে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথোপকথনে ধর্ম অবমাননা হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তাই আজ সকাল থেকেই যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ও বিশৃঙ্খালা নিয়ন্ত্রণে জেলায় বিজিবি, র্যাব ও বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষে চারজন নিহতের প্রতিবাদে মুসলিম ঐক্য পরিষদের ডাকা সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টায় ভোলা সরকারি স্কুল মাঠে এই প্রতিবাদ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় তারা সমাবেশ করছেন না।
এ ঘটনায় এ সংগঠনের অন্যতম নেতা মাওলানা মিজানুর রহমান জানান, পুলিশের বাধার কারণে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে পারছেন না তারা। কিছু সময় পরে তারা ভোলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেবেন।
ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়ছার জানান, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় মুসলিম ঐক্য পরিষদকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জেলায় চার প্লাটুন বিজিবি, দুই প্লাটুন র্যাব ও বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, যে ব্যক্তির ফেসবুক মেসেঞ্জারের কথোপকথন ঘিরে এ ঘটনা ঘটে, সেটি হ্যাকড হয়। কটূক্তিপূর্ণ কথোপকথনের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে তথ্য জানতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। হ্যাকের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ অক্টোবর মেসেঞ্জারের সেই কথোপকথনটি স্থানীয়ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেদিন বিকেলে সেই ব্যক্তি ভোলার বোরহানউদ্দিন থানায় যান এবং তার ফেসবুক আইডি হ্যাকড হতে পারে উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি করেন।
ভোলার পুলিশ সুপার জানান, ফেসবুক হ্যাকিংয়ের অভিযোগে ইতোমধ্যে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ফেসবুক হ্যাকিং সম্পর্কিত সব তথ্য আমরা হাতে পেয়েছি।’
তিনি বলেন, অভিযুক্তদের পুলিশি হেফাজতে রেখে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে প্রশাসন ও পুলিশ উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, এরপরও একটি গোষ্ঠী বিষয়টি উস্কে দিতে থাকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে অভিযুক্তের বিচার দাবিতে গতকাল ঈদগাহ মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে তৌহিদী জনতা। পুলিশের অনুমতি না নিয়েই এ সমাবেশের জন্য মাইকিং করে লোক জমায়েত শুরু করে তারা। সকাল ৯টা থেকে লোকজন মাঠে জড়ো হতে থাকে। মিছিল করতে না পেরে সেখানেই অবস্থান শুরু করে তারা। পরে পুলিশ ‘বাটামারা পীর সাহেব’ মাওলানা মহিবুল্লাহকে সেখান থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করে এবং তাকে ঈদগাহ জামে মসজিদের দোতলায় নিয়ে যায়। ওই সময় গুঞ্জন ওঠে, মাওলানা মহিবুল্লাহকে পুলিশ আটক করেছে।
এ নিয়ে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে কিছু লোক পুলিশের প্রতি সহিংস আচরণ শুরু করে। ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে মসজিদের ইমামের কক্ষে আশ্রয় নেয়। উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে পুলিশ গুলি ছোড়ে।
বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মু. এনামুল হক জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে যার ফেসবুক মেসেঞ্জার থেকে কথোপকথনের স্ক্রিনশট ছড়িয়েছে, তিনি নিজের ইচ্ছায় থানায় আসেন। তিনি এখন পুলিশের হেফাজতে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনা সত্য প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।