ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সাহসী স্বপ্নার গল্প

ছোটন সাহা, ভোলা
🕐 ৯:১৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৬, ২০১৮

পড়ালেখায় বেশ মনোযোগ, জীবনের লক্ষ্য চিকিৎসক হওয়া। সে স্বপ্নপূরণ করতেই নানা প্রতিকূলতায় পড়ালেখা চালিয়ে যান। কিন্তু অষ্টম শ্রেণিতে উঠেই বাধা পড়ে স্বপ্নপূরণে। দরিদ্রতার কারণে বাল্যবিয়ে দিতে চায় তার পরিবার। বিয়ের সব আয়োজনও সম্পন্ন। কিন্তু কিছুতেই বিয়েতে রাজি হয় না সে, একপর্যায়ে নিজেই নিজের বিয়ে বন্ধ করে নতুন জীবনের সূচনা করে। এ গল্প এক সাহসী তরুণী স্বপ্না আক্তারের গল্প।

যিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে নিজের বিয়ে বন্ধ করে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। শুধু তাই নয়, সহপাঠীদের সঙ্গে আবার নতুন করে পড়ালেখা শুরু করেন তিনি।
ভোলা সদরের ভেলুমিয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চন্দ্রপ্রসাদ গ্রামে এ গ্রামে ঘটনা ঘটে। ওই গ্রামের দিন মজুর সেলিমের বড় মেয়ে স্বপ্না স্থানীয় খালেদা খানম বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। শিক্ষকদের সহযোগিতায় ৩ দিন আগে নিজের বিয়ে বন্ধ করে পুরো গ্রামে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
নিজের বিয়ে বন্ধ করায় তাকে সংবর্ধনা দেন জেলা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি। শুধু তাই নয়, তার পড়ালেখার যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব নেন তারা। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩ দিন পূর্বে একই এলাকার জাহাঙ্গীরের ছেলে বিদেশ ফেরত আলামিনের সঙ্গে বিয়ের আয়োজন করে ৮ম শ্রেণিতেপড়ুয়া স্বপ্নার। বিয়ে কথা শুনে কিছুতেই রাজি হন না স্বপ্না আক্তার, কিন্তু তারপরেও জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে করে। একপর্যায়ে নিজের বিয়ে বন্ধ করতে প্রধান শিক্ষককে জানান নিজের বিয়ে বন্ধ করে দেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহে আলম হিরন বলেন, স্বপ্না অনেক মেধাবী, সে পড়তে চায়, বিয়ের বিষয়টি আমাকে জানানোর পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বিয়ে বন্ধ করে হেফাজতে রাখা হয়েছে, সে এখন পরীক্ষা দিচ্ছে।
স্কুলছাত্রী স্বপ্না আক্তার বলেন, আমি পড়ালেখা করতে চাই, আমি ডাক্তার হতে চাই, কিন্তু আমার বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিতে চায়, বাধ্য হয়েই নিজের বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি। এক মাস আগেও একবার বিয়ে দিতে চেয়েছিল, আমি কিছুতেই রাজি হইনি, পড়ালেখা করতে চাই। মানুষের মতো মানুষ হতে চাই।
ভোলা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক অ্যাডভোকেট সাহাদাত শাহিন বলেন, নিজের বিয়ে বন্ধ করে স্কুলছাত্রী স্বপ্না সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছি, আমরা তাকে সংবর্ধনা প্রদান করেছি, আমরা চাই এভাবে সবাই সচেতন হোক। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ছাড়াও আমরা জনসচেতনা সভাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। যাতে সমাজে যাতে বাল্যবিয়ের প্রবণতা বন্ধ হয়ে যায়।
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, স্কুলছাত্রী স্বপ্নাকে তার নানার জিম্মায় রাখা হয়েছে, তার বাবা-মাকেও সতর্ক করা হয়েছে। মেয়েটি এখন নিরাপদ।

 
Electronic Paper