মিন্নির ‘দোষ স্বীকার’, মেয়েকে নির্যাতনের অভিযোগ বাবার
বরগুনা প্রতিনিধি
🕐 ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২০, ২০১৯
রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন জানিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বরগুনার বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে জবানবন্দি দেন মিন্নি। জবানবন্দি শেষে আদালত প্রাঙ্গণে তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা থানার পরিদর্শক হুমায়ূন কবীর বলেন, তিনি (মিন্নি) স্বেচ্ছায় আদালতে বক্তব্য দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে আনা হয়। এবং তিনি বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে মিন্নি কী বলেছেন জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আদালতের কপি পাওয়ার আগে কিছু বলতে পারব না।
ওদিকে মিন্নিকে নির্যাতন করে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন। মিন্নির বাবার অভিযোগ, বিকালে যখন মিন্নির জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছিল সে সময় আদালত প্রাঙ্গণে এসে মেয়েকে নির্যাতন করে জবানবন্দি নেওয়া হয়।
তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আমার মেয়েকে নির্মম নির্যাতন করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য আদালতে নিয়ে আসছে। আমার মেয়েকে যে ধরনের নির্যাতন করেছে সে হয়ত বাঁচবে না। মেয়ে মারা গেলে আমিও বাঁচব না। আমি আত্মহত্যা করব।
এক পর্যায়ে আদালতের সামনে থাকা নারকেল গাছের সঙ্গে মাথা ঠোকেন মিন্নির বাবা। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে খুনিদের আড়াল করতে তার মেয়েকে ফাঁসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমার মেয়ের কাছে কোনো আইনজীবী যেতে পারছেন না। সকল আইনজীবীকে নিষেধ করা হয়েছে কেউ যেন তার পক্ষে আদালতে না যায়। আমার মেয়ে নির্দোষ, সে স্বামী হত্যার বিচার চায়।
মিন্নি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ জানিয়ে তার বাবা বলেন, রিমান্ডে গতকাল নির্যাতনের সময় সে যখন অসুস্থ হয় তখন আমার বাড়ি গিয়ে প্রেসক্রিপশন নিয়ে এসেছে। তখনই বুঝেছি নির্যাতন করা হয়েছে।
তবে মিন্নিকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে পরিদর্শক হুমায়ূন বলেন, এটা সত্য নয়।
রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এ রকম কোনো চাপ নেই।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে জবানবন্দি শেষে মিন্নিকে কারাগারে পাঠানো হয় বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাতকে প্রকাশ্য সড়কে কুপিয়ে হত্যার সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাটি সারাদেশে আলোচনায় উঠে আসে।
পরদিন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ ১২ জনকে আসামি করে যে মামলাটি করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকেই।
সম্প্রতি মিন্নির শ্বশুর তার ছেলের হত্যাকাণ্ডে পত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে আলোচনা নতুন দিকে মোড় নেয়। এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত মঙ্গলবার সকালে মিন্নিকে থানায় ডেকে নেওয়া হয়। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাকে গ্রেপ্তারের কথা জানান বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন।
সে সময় তিনি বলেছিলেন, ওই হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সংশ্লিষ্টতার ‘প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায়’ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া এক আসামির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, টিকটক হৃদয়সহ একাধিক ব্যক্তি আমাদের কাছে স্বীকার যে, মিন্নি এই পরিকল্পনায় জড়িত। আমাদের কাছেও প্রাথমিকভাবে মিন্নির সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রতীয়মাণ হয়েছে।
এরপর বুধবার মিন্নিকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডে চায় পুলিশ, আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
রিমান্ডের তৃতীয় দিনের মাথায় শুক্রবার দুপুর ২টায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়।
রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে জবানবন্দি কেন নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর বলেন, মিন্নির কাছে আমাদের যা জানার ছিল তা জানা হয়ে গেছে। তাছাড়া স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে চাওয়ায় তাকে আদালতে আনা হয়।
উল্লেখ্য, এ মামলার এজাহারভুক্ত ৬ জন ও মিন্নিসহ মোট ১৩ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যা মামলার মূল আসামি সাব্বির আহম্মেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।