ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আজ মহান মে দিবস

‘কাম বেশি হরি, বেতন কোম’

মনোতোষ হাওলাদার, বরগুনা
🕐 ৩:৩৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৩০, ২০১৮

‘দিনভর রাস্তায় মাডি কাটার কাম কইরা ১৫০ টাহার বেতনে জীবন আর চলে না। যেহানে ব্যাডারা দিনে ৪শত টাহা মজুরি পায় হে হানে মোগো দেয় ১৫০ টাহা। মোরা কামও বেশি হরি (করি) বেতনও কোম (কম) পাই।’ বেশ আক্ষেপ করে এসব কথাগুলো বললেন বরগুনার বামনা উপজেলার ছনবুনীয়া গ্রামের হতদরিদ্র স্বামী পরিত্যক্তা মাটিকাটা শ্রমিক কলামতি বেগম।

মহান মে দিবসে তাদের অধিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘মে দিবস হেইডা আবার কি? এইসব কথা বুঝি না, কেউতো কয়নায়। মে দিবস দিয়া মোরা কি হরমু। প্যাডের টানে মাডি কাডি, ওই সব দিন পালন বড়লোকের মোগো না। মোগো বেবাগ দিন হোমান। যদি পারেন মোগো টাহাডা একটু বাড়াইয়া দিতে কইয়েন।’
গতকাল সোমবার সকালে কলামতি বেগমসহ আরও কয়েকজন নারী মাটিকাটা শ্রমিকের সঙ্গে দলবদ্ধ হয়ে জেলার আমতলী গ্রামের একটি রাস্তা সংস্কারের কাজ করছিলেন। এসব নারী শ্রমিক মাটি কেটে বিপর্যস্ত গ্রামীণ রাস্তা মেরামত করে তাদের জীবিকা চালান। অথচ এসব নারীর প্রত্যেকের জীবনই ওই রাস্তার মতো বিপর্যস্ত। সংসার চালানোর তাগিদে মে দিবসের নিয়ে ভাবনার সময় তাদের কারও নেই।
দুই সন্তান নিয়ে ছোনবুনিয়া গ্রামের মরহুম গফুর কাজীর মেয়ে কলামতির সংসার। ঝিয়ের কাজে তেমন মজুরি না থাকায় তিনি যোগ দেন এলজিইডির মাটি শ্রমিকের কাজে। এ কাজে দৈনিক ১৫০ টাকা মজুরি দিয়ে কোনোমতে সংসারের ভরণ পোষণসহ ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মেটায়।
শুধু কলামতি নয়, জেলার এরকম অনেকেই স্বল্প বেতনে সরকারের এই গ্রামীণ রাস্তা সংস্কারের কাজে নিয়েজিত রয়েছেন। তারা প্রত্যেকে মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।  
বরগুনা জেলা স্থানীয় স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার গ্রামীণ রাস্তা অবকাঠামো উন্নয়নে আই.আর.এস.পি-২ ও আর.আর অ্যান্ড সি.এসপি ও এসডব্লিউবিআরডিপি প্রকল্পের আওতায় প্রায় দুই হাজার ৫০০ জন দরিদ্র নারী শ্রমিক কাজ করছেন। প্রতিটি দলে আট থেকে ১০জন নারী মাটিকাটা শ্রমিক মিলে গ্রামের ভাঙা রাস্তায় মাটি ভরাট করে সংস্কারের কাজ করছেন। এসব নারী শ্রমিকরা মাসিক ৪ হাজার টাকা বেতনে দিনভর কাজ করেন।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা স্থানীয় স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম কবীর বলেন, গ্রামীণ রাস্তা সংস্কারে পুরুষের তুলনায় নারীদের ভূমিকা বেশি। তবে, এই নারী শ্রমিকের মজুরি একটু কম পান। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে নারীদের এই মজুরির পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আবেদন করব।

 
Electronic Paper