ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কলাপাড়ায় রিং বেড়িবাঁধ নির্মাণ

জোয়ারে ভাঙবে না বসতি

সোলায়মান পিন্টু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
🕐 ৩:৪৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০১৯

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার বেড়িবাঁধ বিধস্ত নিজামপুর এলাকার মানুষের চোখে মুখে এখন খুশির ঝিলিক। অস্বাভিক জোয়ারের পানিতে আর প্লাবিত হবে না আবাদি জমি, বসতভিটা, পুকুর ও মাছের ঘের। মাঠ জুড়ে থাকবে সবুজের হাতছানি। উৎপাদিত হবে ফসল। দীর্ঘদিনের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্নে বিভোর কৃষক। আগামীর সম্ভাবনার এমন স্বপ্ন দেখছেন বেড়িবাঁধ ভাঙা জনপদ নিজামপুর, পুরান মহিপুর, ইউসুফপুরসহ পাঁচটি গ্রামের ছয় শতাধিক কৃষক পরিবার। চলতি মাসের মধ্যে শেষ হচ্ছে রিং বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ।

স্থানীয়রা জানান, ২০০৯ সালের সিডরের তাণ্ডবে বিধস্ত হয় নিজামপুরের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। মানুষের দুর্ভোগসহ জীবকায়নকে গুরুত্ব দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে বেশ কয়েকবার বাঁধ মেরামত করা হয়। কিন্তু সমুদ্র মোহনার এ গ্রামে সরাসরি সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে বার বার বিলীন হয়ে যায় সে বাঁধ। ফলে বর্ষাকালে জোয়ারের পানিতে ভাসে গ্রামের পর গ্রাম। ভাটায় নদীর পাড় পর্যন্ত শুকিয়ে গেলেও জোয়ারের পানি আটকে থাকে পাঁচটি গ্রামের নিন্ম এলাকায়। ডুবে থাকে চাষাবাদের জমি। দীর্ঘ সময় ধরে চলমান এ সমস্যায় ব্যাহত হয় কৃষিকাজসহ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বর্ষা মৌসুমে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া।

আন্দারমানিক নদীপাড়ের দূর্ভাগা এসব গ্রামের কৃষকসহ সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে সরকার বিগত বছর শুরু করে রিং বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পুরো কাজ শেষ করতে পারেনি। তবে যতটুকু করা হয়েছে তাতে প্রায় টানা চার বছর পর নিজামপুর গ্রামের চাষিরা এ বছর ভালো আমন ফসল পেয়েছেন।

পুরান মহিপুর গ্রামের কৃষক মনির জানান, প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করে বিগত বছর আমন মৌসুমে পনের বিঘা জমি চাষাবাদ করেছিলাম। ধান পেয়েছিলাম মাত্র সতের মণ। অন্য সময়ে এ জমি চাষে পেয়েছি প্রায় তিনশ মণ ধান। নিজামপুর গ্রামের কৃষক ফেরদৌস জানান, নিজ গ্রাম পানিবন্দি থাকায় অন্য গ্রামে বীজতলা তৈরি করতে হয়েছে। বাঁধ নির্মাণের ফলে এখন আর থাকবে না এ সমস্যা।

গণমাধ্যমকর্মী মনিরুল ইসলাম জানান, পলি জমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে আমন ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছেন বাঁধ ভাঙা পাঁচ গ্রামের কৃষক। আগামী দিনে ভালো ফলনের মাধ্যমে পুষিয়ে নিতে পারবেন তাদের বিগত দিনের ক্ষতি।

সবাজসেবক মিজানুর রহমান জানান, বর্ষা মৌসুমে পানিতে গ্রামের পর গ্রাম ডুবে থাকায় জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেকেই হয়েছেন দেশান্তরী। রিং বেড়িবাঁধ নির্মাণের সংবাদে সেসব মানুষ এখন এলাকায় আসতে শুরু করেছেন।

গৃহবধূ নুরজাহান বেগম জানান, জোয়ারের পানির ঝাপটায় তার ঘরটি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বাঁধ নির্মাণের ফলে এখন আর সেই আশঙ্কা নেই। তাই তিনি নতুন একটি ঘর নির্মাণ করেছেন তিনি। পুকরে মাছ চাষও করেছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ জানান, বিগত বছরে যেটুকু বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা মেরামত করা হবে। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই সমাপ্ত হবে বাঁধ নির্মাণকাজ।

 
Electronic Paper