আসামি না হয়েও ১১ মাস জেল খাটলেন শুক্কুর শাহ
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
মামলার আসামি না হওয়া সত্ত্বেও পুলিশের ভুলে ১১ মাস কারাভোগ করলেন বরিশালের মো. শুক্কুর শাহ। রাজধানীর শাহবাগ থানায় মাদকের একটি মামলার আসামি না হয়েও তিনি কারাভোগ করেন।
ছয় মাস আগে বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হলেও আইনি জটিলতা শেষে অবশেষে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি কারামুক্ত হন।
২০১৮ সালের ৮ আগস্ট বিষয়টি ঢাকার ২ নম্বর বিশেষ জজ এএসএম রুহুল ইমরানের গোচরে আনা হয়। আদালত তাৎক্ষণিক এ সংক্রান্ত হাজারীবাগ থানার কাছে প্রতিবেদন তলব করেন। পুলিশ মামলায় থাকা আসামির ঠিকানার বাড়িওয়ালার প্রত্যয়নপত্রসহ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে বলেন, সঠিক আসামিকেই গ্রেপ্তার করেছেন।
আর এভাবেই শুক্কুর শাহ হয়ে যান শুক্কুর আলী। অন্যের পাপ মাথায় নিয়ে জেল খাটলেন ১১ মাস।
গত ৩০ জানুয়ারি মামলার বাদী আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসলে তিনি জেরায় বলেন, কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামিকে তিনি চেনেন না। তাকে এ মামলায় তিনি গ্রেপ্তার করেননি।
টনক নড়ে বিচারকের। তিনি গতকাল মঙ্গলবার সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরীকে এ মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ এবং হাজারীবাগ থানার ওসি মো. ইকরাম আলী মিয়া ও ওয়ারেন্ট তামিল কর্মকর্তা একই থানার এসআই মো. মমিনুল হককে তলব করেন। তারা সবাই সশরীরে আদালতে হাজির হন।
কারাগার থেকে আনা হয় শুক্কুর শাহকেও। পুলিশ এবার নিজেদের ভুল স্বীকার করে আদালতে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
জেল সুপার, ওসি এবং এসআই এর পক্ষে এদিন দুদকের প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল শুনানি করেন, তিনি দাবি করেন মামলায় আসামির যে ঠিকানা দেওয়া আছে, সে ঠিকানার বাড়িওয়ালা আসামিকে শুক্কুর আলী বলে শনাক্ত করেন। তাই এমন ভুলের স্বীকার হয়েছেন তারা।
শুনানি শেষে শুক্কুর শাহ এ মামলার আসামি নয় বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকার ২ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক অন্যকোনো মামলায় আটক না থাকলে শুক্কুর শাহকে আজই (মঙ্গলবার) মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার মাগরিবের নামাজের পর মুক্তি পান শুক্কুর শাহ। যা তার ভাই নজরুল শাহ নিশ্চিত করেছেন।
মামলার ঘটনা সূত্রে দেখা যায়, ২০১১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৫/২, হাজারীবাগের আবুল কাশেমের ছেলে মো. শুক্কুর আলী শাহবাগ থানাধীন কনফিডেন্স ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে ৫০টি নেশাজাতীয় ইনজেশন অ্যাম্পুলসহ গ্রেপ্তার হয়। ওই ঘটনার শাহবাগ থানার ৫৩(২)২০১১ নম্বর মামলায় পরের বছর ২০ জুন তিনি জামিন পান।
জামিন পেয়ে ৩টি ধার্য তারিখে আদালতে না আসায় ২০১৩ সালের ৩ এপ্রিল তার জামিন বাতিল করে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
আসামির ঠিকানা ১৯৫/২, হাজারীবাগের থাকায় আদালত হাজারীবাগ থানাকে ওই পরোয়ানা তামিল করার জন্য পাঠান। পরোয়ানা যাওয়ার পর ওই থানার এসআই মো. মমিনুল ইসলাম দায়িত্ব পেয়ে সংবাদ পান যে, হাজারীবাগ থানার ৯(৩)১৮ মামলায় শুক্কুর নামে এক আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার পিতার নামও কাশেম। তিনি সে অনুযায়ী শাক্কুর শাহকে শাহবাগ থানার মামলার আসামি মনে করে ২০১৮ সালের ৪ মার্চ আদালতে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। এভাবেই আদালতের নথিতে বরিশাল জেলার আগলঝড়া থানার আবুল কাশেম শাহের ছেলে শুক্কুর শাহ হয়ে যান শুক্কুর আলী।
শুক্কুর শাহ আইনজীবী মো. জাকির হোসেন সাংবাদিকদের জানান, হাজারীবাগ থানার মামলায় ২০১৮ সালের মে মাসে জামিনে পেয়েও শুক্কুর শাহ কারাগার থেকে বের না হওয়ায় পরে খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারে তাকে শাহবাগ থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরে ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট বিষয়টি দরখাস্তের মাধ্যমে তিনি আদালতের নজরে আনেন।
তিনি বলেন, শুক্কুর শাহ যে শুক্কুর আলী নন তা আদালতে জানানোর পরও অতিরিক্ত ছয়মাস তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে আইনি জটিলতায়। বাদী তাকে শনাক্ত না করলে আরও কতদিন তাকে থাকতে হতো কে জানে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, বিনা অপরাধে তিন বছর কারাভোগের পর হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন জাহালম। দুদুকের করা ৩৩টি মামলায় বিনা অপরাধে কারা ভোগ করতে হয় জাহালমকে। সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু দুদকের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর কারাগারে কাটা হয় জাহালমকে।