একাডেমিক ভবন ও শিক্ষক সংকটে ‘পিরোজপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’
পিরোজপুর প্রতিনিধি
🕐 ৫:১১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০২৩
প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক শ্রেণি কক্ষ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর শিক্ষক স্বল্পতা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পিরোজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। ৮টি শ্রেণির ৩টি বিভাগের প্রায় সতেরশত শিক্ষার্থীর জন্য ২৬টি কক্ষের প্রয়োজন হলেও সেখানে কক্ষ রয়েছে মোট ১২টি। প্রায় শতবর্ষী পুরানো এই বিদ্যালয়টিতে ৪৯ টি পদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৩০ জন।
জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপিঠ পিরোজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯০৭ সালে বলেশ্বর ও দামোদর নদের তীরে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এর লেখাপড়ার মান খুব ভালো ছিলো। সময়ের ব্যবধানে শিক্ষার্থী অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং একটি অতি পুরাতন ভবন ভেঙ্গে ফেলায সেখানে কক্ষের সংকট সৃষ্টি হয়। কোন কোন শ্রেনিতে ২ শতাধীক শিক্ষার্থী রয়েছে।
সেখানে ২টি শাখা থাকলেও শ্রেণি কক্ষের অভাবে এক কক্ষেই ঠাসাঠাসি করে বসতে হয়। ফলে লেখা পড়ায় মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে কক্ষের অভাবে ভাঙ্গা ভবনের টেবিল বেঞ্চসহ অন্যান্য ফার্নিচার খোলা আকাশের নিচে থাকায় তা নষ্ট হচ্ছে।
পিরোজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীলিপ কুমার মৃধা, বলেন, একাডেমিক ভবনের সংকট, শিক্ষক স্বল্পতা, রয়েছে বিদ্যালয়ে। নবম দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, বানিজ্য আর মানবিক শাখা থাকলেও একই কক্ষে তাদের পাঠদান করায় শিক্ষার গুনগত মান রক্ষা হচ্ছে না। আর স্কুলের সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গা থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে এখানকার শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বর্ষাকালে মাঠে পানি জমায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্লাস করায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে এখানকার শিক্ষার্থীরা। নেই প্রধান শিক্ষকের বাস ভবন।
প্রধান শিক্ষক বলেন, ইংরেজীতে ৮ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও আছেন ৩ জন। গণিতে ৬ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও আছে ৪ জন। সামাজিক বিজ্ঞানে ৪ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও একজনও নাই। ইসলাম শিক্ষায় ৪ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও আছেন ৩ জন। ভৌত বিজ্ঞানে ৪ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও আছে ২ জন। জীব বিজ্ঞানে ৪ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও আছে ১ জন। ভুগোলে ২ জনে আছে ১ জন। ব্যবসায় শিক্ষা ৪ জনের পদ থাকলেও আছে ৩ জন।
পিরোজপুর শহরের সি আই পাড়া এলাকার বাসিন্দা শেখ হাসান মামুন জানান, আমার এক নিকট আত্মীয়ের সন্তান এ বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তাকে ভর্তি করাতে এসে জানলাম এ বিদ্যালয়ে একডেমিক ভবনের সংকটের কথা।
পিরোজপুর জেলা শিক্ষা অফিসার, মো: ইদ্রিস আলী আযিযী বলেন, আমি পিরোজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারী পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলাম। আমি যোগদানের পড়ে জানতে পারি এ বিদ্যলয়ের একটি ভবন ২০০৭ সালে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়। তখন আমি চেষ্টা চালিয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের সহযোগিতায় পরিত্যাক্ত ভবনটি দ্রুততম সময়ে অপসারণ করি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য নতুন একটি ভবন খুবই জরুরী।
তিনি বলেন, জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির এ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের দুরাবস্থাসহ অন্য দুরাবস্থার কথা তুলে ধরা হয়।
পিরোজপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বলরাম কুমার মন্ডল জানান, পিরোজপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভবন সংকটের কারণে পাঠদান বিঘ্ন হওয়ার বিষয়টি প্রধান শিক্ষক আমাকে জানিয়েছেন। এ বিদ্যালয়ে নতুন একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করার চেষ্ট চলছে। প্রথমে কথা ছিল শিক্ষা মন্ত্রনালয় সারাদেশে লিফটসহ ১০ তলা ভবন করার সিদ্ধান্ত ছিল। বিদ্যুতের কারণে লিফটে সমস্য হতে পারে এ কারণে ভবন ১০ তলা হবে না ৬ তলা হবে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, বিষয়টি মাননীয় মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমও জানেন।
পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, আমি গত ১ জানুয়ারি পিরোজপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বই বিতরণ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীলিপ কুমার মৃধা একাডেমিক ভবন সংকটসহ অন্যান্য সমস্যার কথা তার বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। চেষ্টা চালাচ্ছি স্বল্প সময়ে সেখানে একটি নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের।