ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পর্যটনের অপার সম্ভাবনা

এক ভ্রমণে ঘুরে আসুন চার সৈকত

আল আমিন, রাঙ্গাবালী
🕐 ৫:০১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০২৩

এক ভ্রমণে ঘুরে আসুন চার সৈকত

চোখ জুড়ানো আর দৃষ্টিনন্দন ওই সমুদ্র সৈকতের নাম- জাহাজমারা, তুফানিয়া, সোনারচর ও চরহেয়ার। পর্যটনের অপার সম্ভাবনায় ঘেরা সৈকত চারটির ভৌগোলিক অবস্থান নদী ও সাগর বেষ্টিত পটুয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে।

কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল। বইছে দক্ষিণাশীতল বাতাস। পূর্বাকাশে সূর্যমামা দেখা মেলেনি তখনও। শীতের শীতল সকালে সৈকতের তটরেখায় লাল কাঁকড়ার দল বেঁধে ছোটাছুটি। ঢেউয়ের গর্জন। সবুজ বনাঞ্চল। গাছে গাছে পাখির কলকাকলি এবং সূর্যোদয় দেখতে একঝাঁক পর্যটক এসেছে সমুদ্র সৈকতে। বেলাবাড়ার সাথে সাথে পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে লাগলো এখানে যেমন আছে পর্যটন সম্ভাবনা, তেমনি রয়েছে কিছু সমস্যাও। এখানকার পর্যটন সম্ভাবনায় বাঁধা যোগাযোগ ব্যবস্থা, হোটেল-মোটেল না থাকা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়া।

৩০ কিলোমিটার দূরের সৈকত কুয়াকাটার চেয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে রাঙ্গাবালীর পর্যটন স্পটগুলো এগিয়ে। কিন্তু যাতায়াতে সময় বেশি হওয়ায় পিছিয়ে ছিল এখানকার পর্যটন সম্ভাবনা। পর্যটনের সম্ভাবনাময় এলাকা হিসাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে এখানে পর্যটনের ব্যাপক বিকাশ ঘটবে এবং অর্থনৈতিক আমূল পরিবর্তন হবে এমনটা মনে করছেন পর্যটকরা।

সূর্যোদয় দেখতে আসা পর্যটক কাসফিয়া জানান, যান্ত্রিক শহরে বাস করে ক্লান্ত। সতেজতা ও প্রকৃতির সাথে আলাপ করতে নানু বাড়ি বেড়াতে এসেছি। নানাভাই বলতো এখানে খুব কাছ থেকে সূর্য দেখা যায়। সে সঙে অতিথি পাখির মিলন মেলা। প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে দেখতে বেড়াতে এসেছি। শহরে বেড়ে ওঠা এ জন্য পানি দেখলে ভয় করে। কিন্তু এখানে এসে খুব ভাল লাগছে। এই সৈকতে পানি সাথে খেলা করেছি। সব মিলিয়ে ভাল একটি সকাল কেটেছে। বিকেলে নানাভাই তুফানিয়া চর নিয়ে যাবে আমাদের।
জাহাজমারা ট্যুরিজমের ব্যবস্থপনা পরিচালক আজিজুর রহমান সুজন বলেন, এখন থেকে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকরা ট্রলার কিংবা স্পিডবোট যোগে জাহাজমারা পর্যটনকেন্দ্র গুলোতে যেতে পারবে। দূষণ কোলাহল মুক্ত এ এলাকায় আসলে মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়।

সৌন্দর্যমণ্ডিত পর্যটন স্পটের নিদর্শন- অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে জেগে থাকা ‘সোনারচরে’ সোনা নেই ঠিকই, কিন্তু আছে সোনালি আভা। সূর্যের রশ্মি যখন সৈকতের ওপর পড়ে তখন দূর থেকে মনে হয়, সত্যিই সোনার আবির্ভাব হয়েছে এখানে। মনে হবে প্রলেপ দেওয়া হয়েছে স্বর্ণের। সোনারচর উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে সাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত। বন বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, সুন্দরবনের পরেই আয়তনের দিক থেকে এটি বৃহত্তম বনাঞ্চল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুবিশাল সমুদ্র সৈকত।

সৌন্দর্যের কমতি নেই ‘জাহাজমারা’ দ্বীপেও। দ্বীপটির ভৌগোলিক অবস্থান মৌডুবি ইউনিয়নে। জাহাজমারার কাছেই আরও দুটি দ্বীপ রয়েছে। একটির নাম ‘তুফানিয়া’, অন্যটির নাম ‘চরহেয়ার’। যেখানে আছে নিবিড় সবুজের সমারোহ। সৈকতে অগণিত লাল কাঁকড়ার ঝাঁক। আছে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। বন বিভাগের ঘন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। জেলে নৌকার বহর। কোনোটিতেই নেই হোটেল-মোটেল। পর্যটকদের সুবিধার জন্য সোনারচর, জাহাজমারা, তুফানিয়া ও চরহেয়ারে পন্টুন স্থাপন করা জরুরি। একইসঙ্গে হোটেল-মোটেল ও রেস্ট হাউজসহ আধুনিক অবকাঠামো তৈরি করলে পর্যটকদের এসব দ্বীপে আসার আগ্রহ আরও বেড়ে যাবে।

প্রশাসনের তথ্য বলছে, রাঙ্গাবালীর পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে ট্যুরিস্ট জোন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পদ্মা সেতু হওয়ায় সেই সম্ভাবনা আরও বেড়েছে।

যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলা পর্যন্ত যাবেন। ভাড়া জনপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। গলাচিপা সদর থেকে সড়ক পথে ১৫ থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে পানপট্টি কিংবা বোয়ালিয়া ঘাটে যাবেন। সেখান থেকে স্পিডবোট কিংবা লঞ্চে রাঙ্গাবালী যাবেন। ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা ও ৬০ টাকা। এছাড়াও ঢাকার সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ৬ টায় দোতলা লঞ্চ ছেড়ে আসে রাঙ্গাবালীর উদ্দেশ্যে। ভাড়া সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ৩০০ ও ডাবল ২ হাজার ৫০০ ।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সালেক মূহিদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে চারটি সমুদ্র সৈকতে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিসজোন করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে পর্যটন করপোরেশন। এর প্রেক্ষিতে সম্প্রতি যোগদান করা নতুন জেলা প্রশাসক মহোদয় এসে চারটি সৈকত ভিজিট করে গেছে। পর্যটন স্পটগুলো নিয়ে পরিকল্পনা আছে এবং আমরা কাজ করছি।’

 
Electronic Paper