ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের বেহালদশা

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
🕐 ৩:১৮ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০২২

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের বেহালদশা

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি হারানো আশ্রয়হারা হতদরিদ্র মানুষের পুনর্বাসনে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে নির্মিত হাজার হাজার ঘর এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জীর্ণদশার কারণে এসব ঘরে আশ্রিত হাজারো পরিবার পুনর্বাসনের ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। ফলে ফের আশ্রয়হারা মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলছে।

জানা গেছে, সরকারি হিসাবে কলাপাড়ায় অন্তত ১৭০টি ব্যারাক হাউস করা হয়েছে। এছাড়া গুচ্ছ গ্রাম ও আদর্শ গ্রাম করা হয়েছে আরও দশটি। যেখানে কমপক্ষে দুই হাজার পরিবারের আবাসস্থল রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় দেড় হাজার পরিবার বসবাস করছে। হতদরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সরকারের উদ্যোগে ক্ষুদ্রঋণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২০১৩ সালে। মাত্র তিনটি আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের জন্য তখন ২২ লাখ টাকার ঋণ দেয়া হয়েছিল। বাকিরা বঞ্চিত রয়েছে এখনও। এসব পরিবারের সদস্যরা কোন উপায় না পেয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে চড়াসুদে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে।

ঘুর্ণিঝড় সিডর বিধ্বস্তে উপকূলীয় কলাপাড়ায় ১২ হাজার নয় শ’ পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়েন। তখন এসব পরিবারকে আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের আবাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়। ঠিকানাহারা এসব মানুষকে পুনর্বাসনে সরকারিভাবে আবাসন, বিশেষ আবাসন, জাপানি ব্যারাক হাউস, আশ্রায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন ইউনিয়নে দেড় শতাধিক ব্যরাক হাউস করা হয়। যেখানে প্রায় দুই হাজার পরিবারের আশ্রয়স্থল করা হয়। এছাড়া বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে পাঁচ হাজার পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়। ২০০৭ সালের সিডর পরবর্তী সময় থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পুনর্বাসনের কাজ চলে।

কিন্তু তিন বছর না যেতেই এসব ঘরের এখন ব্যবহার উপযোগিতা নেই। টিনের চাল ঘুর্ণিঝড় মহাসেনে উড়ে গেছে। কোথাও আবার স্থানীয় লোকজন খুলে নিয়ে গেছে আবাসন ব্যারাকের বেড়া কিংবা চাল। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সরকার ছিন্নমূল শ্রমজীবি মানুষকে আশ্রয়স্থল করে দিলেও সংশ্লিষ্টদের যথাযথ তদারকির অভাবে সকল উদ্দেশ্য চরমভাবে ব্যাহত হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চাকামইয়া ইউনিয়নের গামুরি বুনিয়ায় ২০০৮ সালে এক শ’ পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য ১০টি টিনশেড ব্যারাক করে দেয়া হয়। ১০ নম্বর ব্যরাকের ৭ নম্বর কক্ষের সালমা বাদল হাওলাদার দম্পতি জানালেন, পাঁচ বছর আগে তারা এখানে উঠেছেন। বর্তমানে থাকার উপায় নেই। চাল উড়ে গেছে মহাসেন ঘূর্নিঝড়ে। সাত নম্বর ব্যরাকের নয় নম্বর কক্ষে থাকছেন রাবেয়া আলফাজ দম্পতি। তাদের জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ থাকলেও তারা থাকছেন তিনটি কক্ষ দখল করে। ৬ নম্বর ব্যারাকের আটটি কক্ষ খালি পড়ে আছে। বেড়ার টিন উধাও হয়ে গেছে এসব কক্ষের। এই ব্যারাকের তিনটি কক্ষে এখন গবাদি পশু রাখা হয়। পাঁচ নম্বর ব্যারাকের ১০টি কক্ষের চারটি খালি পড়ে আছে। এভাবে এখানকার ১০টি ব্যরাকের ১০০ কক্ষের অন্তত ৬০টি খালি পড়ে আছে। তিন নম্বর কক্ষের বাসিন্দা তারা বানু জানালেন, তাদেরকে সরকারি উদ্যোগে কোন সহায়তা দেয়া হয়নি।

একই অবস্থা চর ধুলাসারের দুইটি ব্যারাকের ২০টি কক্ষের অর্ধেক, চরচাপলীর তিনটি ব্যারাকের ৩০টি কক্ষের ২১টি খালি পড়ে আছে। সবচেয়ে বড় আবাসন প্রকল্প রয়েছে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নীলগঞ্জ গ্রামের নদীর পাড়ে। এখানে ২৮টি ব্যারাকে ২৮০টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। এসব পরিবারের সদস্যদের সমবায়ের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়েছে ক্ষুদ্রঋণ। কিন্তু কোনটাই সফলতায় পৌছেনি। ঘরগুলো জীর্ন হয়ে গেছে।

চর ধুলাসার আবাসনের বাসিন্দা স্বামী পরিত্যক্তা রাণী বেগম জানালেন, তাদের কোন ধরনের সহায়তা দেয়া হয় না। গবাদিপশু পালনের সুযোগ নেই। একইদশা চাকামইয়া নিশান বাড়িয়া, খাজুরা, ফাঁসিপাড়া, পাখিমারা গুচ্ছ গ্রামের, আনিপাড়া, লেমুপাড়া, লোন্দা, ছোট বালিয়াতলী, তেগাছিয়া, ফতেহপুর আশ্রয়ন কিংবা আদর্শ গ্রামের।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, ওইসব আবাসন-আশ্রায়ণ মেরামতের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষ উপলকক্ষে প্রত্যেক গৃহহীন-ভূমিহীনকে দুই শতক জমিসহ আলাদাভাবে সেমিপাকা ঘর দেয়া হচ্ছে। কোন গৃহহীন কিংবা ভূমিহীন বাদ পড়বে না।

 
Electronic Paper